রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন।

রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ ও এইচ এম ইলিয়াস হোসাইন শুনানি শেষে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। 

আসামিপক্ষের আইনজীবী আলী আশরাফ মাসুম জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে গত ২৩ সেপ্টেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের পর বিএনপির এই তিন নেতা জামিন আবেদন করেন।

ওই দিন আদালত শুনানির জন্য ২৬ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। দুপক্ষের শুনানি শেষে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই তিন নেতার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন বহাল রেখেছেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২ মার্চ বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাসহ নির্বাচিত সরকার উৎখাতের প্রকাশ্য হুমকি দেন বিএনপি নেতারা। এ নিয়ে ১৬ মার্চ বিএনপির চার নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক মুসাব্বিরুল ইসলাম।

পাঁচ মাস পর বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বাদে তিন নেতা উচ্চ আদালত থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলার অর্ন্তবর্তী জামিন পান।

গত ২৫ আগস্ট বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের দ্বৈত বেঞ্চ তাদের ৪ সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন। এ মামলার অপর আসামি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তিনি এখনো জামিনের আবেদন করেননি।

২ মার্চ বিকেলে নগরীর মাদ্রাসা মাঠসংলগ্ন কনভেনশন সেন্টারে রাজশাহী নগর বিএনপির আয়োজনে সমাবেশ হয়। মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

শফিকুল হক মিলনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন মিজানুর রহমান মিনু। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মিনু বলেন, ‘আজ রাত, কাল আর সকাল নাও হতে পারে। ’৭৫ মনে নাই?’ সেই সমাবেশে মিনু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন।’

মিনুর এই বক্তব্য প্রচারের পর থেকেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে নগর আওয়ামী লীগ। পর দিন (৩ মার্চ) এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়। সেখানে মিনুকে জাতির সামনে ক্ষমা চাইতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ক্ষমা না চাইলে মিনুর বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দেন লিটন।

এরই মধ্যে গত ৭ মার্চ বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে দুঃখ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন মিজানুর রহমান মিনু। ওই বিবৃতিতে তার বক্তব্যে ষড়যন্ত্র না খোঁজার অনুরোধ জানান মিনু।

৯ মার্চ রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল জলিলের কাছে বিএনপির মোট ৪ নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ জমা দেন অ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম। জেলা প্রশাসকের দফতর হয়ে সেই আবেদন যায় নগর পুলিশ কমিশনারের দফতরে। সেখান থেকে যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএনপির চার নেতার নামে মামলার অনুমোদন দেয়।

এরপর ১৬ মার্চ ‘প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা এবং সরকার উৎখাতের হুমকি’র পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ (আমলি আদালত বোয়ালিয়া) এ মামলা আমলে নেয়।

মামলার বাদী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম। গত ৩১ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর