মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউনয়নের মিঠাপুর পুরাতন বাজারের পাশে খাস জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে ১৫টি আধা পাকা ঘর। সেই ঘরে চারটি পরিবার বসবাস করছেন না। জমি ও ঘর তাদের নামে নিবন্ধন হলেও থাকছেন অন্য চারটি পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমিহীন, গৃহহীন ও অসহায়দের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে মিঠাপুর পুরাতন বাজারের পাশে ১৫টি আধা পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। এসব জমি রেজিস্ট্রি ও খারিজসহ মালিকানা হস্তান্তর করা হয়। কিছু দিন বসবাস করার পর ৪, ৯, ১১ ও ১২ নম্বর ঘরে সুবিধাভোগীরা বসবাস করছেন না। 

জানা গেছে, এসব পরিবারের জমি আছে কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় ঘর করতে পারেননি। আবার তারা তাদের স্বজনদের রেখে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতেও চান না। ঘরগুলো ফাঁকা থাকায় ইউএনও নতুন চারটি পরিবার তুলে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বসবাসকারীরা। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করলেও তাদের নামে ঘর দেওয়া হয়নি। আধা পাকা ঘরে শান্তিতে বসবাস করলেও নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি না হওয়ায় দুশ্চিন্তা যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না।

এদিকে একই পরিবারের মৃত আবুল হোসেনের স্ত্রী বেলিকে ৩ নম্বর এবং তার ছেলে হেলাল হোসেনকে ৬ নম্বর ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বেলি মিঠাপুর পুরাতন বাজারে গত ২০-২৫ বছর সরকারি জায়গায় দোকান করে জীবিকা চালান। দোকানের সঙ্গে লাগানো ঘরে তিনি থাকেন। মাঝেমধ্যে সরকার থেকে দেওয়া ঘরে রাতে গিয়ে থাকেন।

ছেলে হেলাল হোসেন উজালপুর গ্রামে টিন দিয়ে তৈরি ঘরে বসবাস করেন। জমি কেনার জন্য টাকা পরিশোধ করলেও মালিকদের জটিলতায় এখনও তার নিজস্ব বাড়ির জমি রেজিস্ট্রি হয়নি। মা ও ছেলেকে ঘর দেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সুবিধাভোগীদের তালিকা এভাবে করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতা ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

১২ নম্বর ঘরে স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে নতুনভাবে বসবাস করছেন সাজেদুর ইসলাম। তিনি বলেন, ভ্যান চালিয়ে ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। গত পাঁচ মাস থেকে এ ঘরে বসবাস করছি। ঘরটি অন্য একজনের নামে থাকলেও তারা বসবাস করছিল না। ইউএনও স্যার একদিন এসে ঘরের তালা ভেঙে আমাদের তুলে দিয়েছেন। ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি নিয়ে গেছেন তিনি। তবে পাশের গ্রামে সাজেদুরের নিজস্ব বাড়ি আছে, কিন্ত সে জমির মালিক তার মা।

৯ নম্বর ঘরে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন ফাতেমা। তিনি বলেন, স্বামী রাজু আহমেদকে নিয়ে ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতাম। গ্রামে এলে আত্মীয়দের বাড়িতে থাকতে হতো। আমাদের বসবাস করার মতো কোনো জায়গা নেই। দুরাবস্থা দেখে ইউএনও স্যার এ ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে পাকা ঘরে শান্তিতে থাকতে পারছি। এ ঘরে আগে রেজিয়া নামে একজন থাকত। তার নামেই ঘরটি আছে। ঘরটি আমাদের নামে কাগজপত্র করে দিলে চিন্তা মুক্ত থাকতাম। তা না হলে হঠাৎ করে একজন এসে তার বলে দাবি করতে পারে।

খাদাইল নগর গ্রামের গৃহবধূ রাফিয়া বলেন, একদিন স্যারেরা গ্রামে এসে আমার টিনের ঘর দেখে ছবি ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে যান। তারা বলেছিলেন এখানেই ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। এরপর আমাদের এক দিন ডেকে নিয়ে মিঠাপুর পুরাতন বাজারের পাশে তৈরি করা সরকারি ঘরে বসবাসের জন্য কাগজপত্র দেয়। কয়েকদিন সেখানে ছিলাম। কিন্তু বাড়ি থেকে দূরে হওয়ায় সেখানে আর থাকা হলো না। আমার বাড়ি করার জায়গা আছে। সেই জায়গায় ঘর তৈরি করে দেওয়ার কথা ছিল। পরিবারের সাত সদস্য রেখে ওই ঘরে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। ওই ঘরে এখন অন্যজন বসবাস করছে।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, যে চার পরিবার চলে গেছে তাদের নামে জমির কাগজপত্র হয়ে আছে। তবে নতুন যারা ওই ঘরগুলোতে বসবাস শুরু করেছে তাদের নামে জমি ও ঘরগুলো করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই পরিবারের দুই সদস্য ঘর পেতে পারে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়টি জানা নেই। আমি উপজেলায় যোগদানের আগে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। যদি দুজনই ভূমিহীন এবং আলাদা সংসার হয়ে তাহলে তারা ঘর পাওয়ার যোগ্য। তবে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।

এসপি