৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল

কৃষক নিজাম উদ্দিন ও গৃহিণী সাহারা খাতুনের আদরের সন্তান আশরাফুল (১২)। ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন তারা। অসচ্ছল পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম তার বাবা। বাবার সামান্য উপার্জনে সংসার চালানোর পাশাপাশি বড় ছেলে মুন্না ও ছোট ছেলে আশরাফুলের পড়ালেখার খরচ মেটানোর পর মাস শেষে হাতখরচে টান পড়ত। তবুও কোনোভাবে চলছিল তাদের জীবন।

কিন্তু করোনায় দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাড়িতে ছিল আশরাফুল। বাবা-মা বাড়িতে বসিয়ে না রেখে তাকে চাকরিতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পারিবারিক সিদ্ধান্তে চাচা কামাল তাকে গাজীপুরের সদর উপজেলার মনিপুর বাজারে রনি মিষ্টান্ন ভান্ডার নামের একটি খাবার হোটেলে দৈনিক হাজিরায় চাকরি দেন।

কথাছিল করোনার পর বিদ্যালয় খুললে তাকে চাকরি থেকে সরিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠানা হবে। কিন্ত করোনার পর বিদ্যালয় খুললেও আশরাফুলের আর বিদ্যালয়ে যাওয়া হয়নি।

আশরাফুল (১২) কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিনের ছেলে। সে স্থানীয় রামচন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আশরাফুলের সঙ্গে কথা হয় তার কর্মস্থল রনি মিষ্টান্ন ভান্ডারে।

আশরাফুল জানায়, তাদের বাবার বাড়ির ভোলা জেলায়। ৫ বছর আগে তারা এ এলাকায় চলে আসে। বাবা পেশায় একজন কৃষক ও মা গৃহিনী। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাবা-মা তাকে কাজে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে হোটেল কর্মচারী চাচার সঙ্গে সদর উপজেলার মনিপুর বাজার এলাকায় ওই হোটেলে চাকরি হয়।

রনি মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী হিরণ চন্দ্র ঘোষ বলেন, চাচা কামালের অনুরোধে আশরাফুল মাসখানেক আগে হোটেলে কাজে নেওয়া হয়েছিল। কাজে যোগ দেয়ার সময় আমি তাকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিলাম। সে যখনই চলে যেতে চাইবে তাকে যেতে দেওয়া হবে। তাকে বিদ্যালয়ে যেতে হোটেলের পক্ষ থেকে কোন ধরনের অসহযোগিতা করা হবে না।

রামচন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সবদুল হোসেন বলেন, করোনায় যখন বিদ্যালয় বন্ধ ছিল তখন শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা এবং বাসায় পড়াশোনার দিক নির্দেশনা দেওয়া হতো।  বিদ্যালয় খোলা হলো আমরা শিক্ষার্থীদের দেওয়া মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করেছি। যারা অনুপস্থিত আছে তাদের সহপাঠী দিয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যারা ঝরে পড়েছে তাদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা কাজ চলছে।

শিহাব খান/এমএসআর