নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সমুদ্র উপকূলবর্তী ঘাটগুলোতে ট্রলারভর্তি মাছ নিয়ে ফিরছেন জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার আগ মূহূর্তে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। এখানকার নদ-নদী ও সাগর মোহনায় আশানুরূপ ইলিশ পাওয়ায় জেলেপল্লিতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

নিষেধাজ্ঞা শুরুর আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। প্রজনন মৌসুমের কারণে টানা ২২ দিন সাগর এবং নদীতে ইলিশ শিকার বন্ধ থাকবে। আর তাই শেষ মুহূর্তে ইলিশ মজুতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেতারাও। নিষেধাজ্ঞার সময়ে চাহিদা পূরণে ইলিশ কিনে তা ফ্রিজিং করে রাখা হচ্ছে।

ইলিশ মজুত রাখতে প্রয়োজন বরফের তাই বেড়েছে বরফের ব্যাপক চাহিদা। বরফকলের শ্রমিকদের যেন বিশ্রামের সুযোগ নেই। ঘাটে ট্রলার ফিরলেই বরফভর্তি ট্রলার ছুটছে সাগরে। আবার ট্রলার ঘাটে ফিরলেই মজুতে প্রয়োজন হচ্ছে বরফ।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটের মেঘনা আইস ফ্যাক্টরিতে একদিকে চলছে বরফ তৈরি অন্যদিকে চলছে বিক্রি। মাঝিদের চাহিদামতো বরফ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শ্রমিকদের।

মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা। সরকার নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে শুধু ইলিশ নিধনই নয় পরিবহন, মজুত, বাজারজাত, আমাদানি-রফতানিতেও নিষেধাজ্ঞা থাকছে। যে কারণে নিষেধাজ্ঞার টানা ২২ দিন ইলিশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের।

তাই নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই ইলিশ মজুতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী এবং ক্রেতারা। বিশেষ করে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইলিশের চাহিদা মেটাতে সাধারণ ক্রেতারা যে যার মতো করে ইলিশ ক্রয় করে তা ফ্রিজ কিংবা লবণ দিয়ে মজুত করছেন। নিষেধাজ্ঞার দুই একদিন আগে ইলিশের মূল্য বেশি হওয়ার কারণে এখনই তারা ইলিশ কেনার কাজটি সেরে ফেলছেন।

জেলা শহরের পৌর বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন বাজারে বড় বড় সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। যার সবই নদীর ইলিশ। দামও একটু বেশি। একসঙ্গে বড় সাইজের ১০ কেজি ইলিশ কিনেছি। কাল বাজারে ইলিশ পাওয়া যাবে না। তাই আগেভাগেই ইলিশ কিনে তা ফ্রিজিং করে রেখেছেন।

হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার এবং কয়েকজন পাইকার বলেন, বর্তমান সময়টা ইলিশ মৌসুমের শেষ হয়। ২ মাস আগে মৌসুম শুরু হলেও শেষ দিকে এসে নদীর ইলিশ ধরা পড়ছে। দু সপ্তাহ ধরে মোকামে প্রচুর ইলিশ আসছে। যার কোনোটির পেটেই ডিম নেই। অথচ তার মধ্যেই ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে।

চেয়ারম্যান ঘাটের নুর উদ্দিন মেম্বার মৎস্য আড়তের মালিক রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফিশিং বোট ঘাটে আসলেই আমাদের বরফের প্রয়োজন। আমরা আগে থেকেই বরফের অর্ডার দিয়ে রাখি। বর্তমানে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। তাই মজুত রাখতে প্রয়োজন বরফের কিন্তু এত বরফ তৈরি করতে পারছে না বরফকলগুলো।

চেয়ারম্যান ঘাটের মেঘনা আইস ফ্যাক্টরির ম্যানেজার আবদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার আগমূহূর্তে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশ মজুত রাখতে বরফের ব্যাপক চাহিদা। আমাদের বরফকল শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।

হাসিব আল আমিন/এমএসআর