সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের হাওলাদার বাড়ি বায়তুন নাজাত জামে মসজিদের মুসল্লিদের নামাজের ভোগান্তি চলছে টানা দুই মাস। কারণ, মসজিদটি এখন হুমকির মুখে। যেকোনো মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যেতে পারে নদীগর্ভে। তবে বিকল্প হিসেবে নামাজের জন্য বিশেষভাবে ভাসমান মসজিদ তৈরি করে দিয়েছে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে জোহর নামাজের মধ্য দিয়ে ভাসমান মসজিদটির উদ্বোধন করা হয়েছে। সম্প্রতি মসজিদটিতে আজান দেওয়ার জন্য ও নামাজ আদায়ের জন্য ইমামকে সাঁতরে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেলে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

জানা যায়, ভাসমান মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট, প্রস্থ ১৬ ফুট। রয়েছে আজান দেওয়ার জন্য একটি মাইকসেট, ওজুখানা, পানি ব্যবহারের জন্য চারটি ট্যাব ও একটি টয়লেট। এই মসজিদে মুসল্লিদের তেলাওয়াত করার জন্য রাখা আছে চারটি পবিত্র কোরআন মাজিদ।

হাওলাদার বাড়ি বায়তুন নাজাত জামে মসজিদের ঈমাম ও খতিব হাফেজ মঈনুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমফান ও ইয়াসের সময় খোলপেটুয়া নদীর বন্যতলা এলাকার বাঁধ ভেঙে যায়। নদীভাঙন ধীরে ধীরে লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসতে শুরু করে। গত ১০ আগস্ট থেকে নদীর পানি মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে। রাস্তাটিও ধসে যায়। এরপর থেকে মসজিদে নামাজ আদায় ও আজান দেওয়ার জন্য সাঁতরে যেতে হতো।

তিনি জানান, আজ (মঙ্গলবার) এলাকার মুসল্লিদের কথা চিন্তা করে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন নৌকার ওপর বিশেষভাবে নির্মিত একটি ভাসমান মসজিদ উপহার হিসেবে দিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নাসিরউদ্দীন সাহেব এটি তুলে দেন। দুপুরে জোহরের নামাজের মধ্যদিয়ে মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে।

ভাসমান এ মসজিদে একসঙ্গে ৫০ থেকে ৫৫ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। এখন থেকে আজান দেওয়া ও নামাজ আদায় ভাসমান মসজিদেই হবে। আগে এলাকার ৩০০ থেকে ৪০০ মুসল্লি এই মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। তবে জুমার দিন এত মানুষের জায়গা এখানে হবে না। জুমার দিন পার্শ্ববর্তী কোনো মসজিদে নামাজ আদায় করতে হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুই বছর ধরে বিভিন্ন সময় এই অঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এলাকার মসজিদগুলোয় পানি উঠে যায়। তাই নামাজ আদায় করা যায় না। এই পরিস্থিতিতে এই ভাসমান মসজিদটিতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারবেন। এতে তারা খুশি।

মসজিদ কমিটির সভাপতি মৌলভী ইবাদুল সানা বলেন, দুই মাস ধরে আমরা নামাজ আদায় করতে পারছি না এই মসজিদে। ভাসমান মসজিদটি পেয়ে অনেক উপকার হয়েছে। এখন জামাতে নামাজ আদায় করব। যারা এটি করে দিয়েছেন, তাদের জন্য আমরা দোয়া করব।

আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নাসিরউদ্দীন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, মসজিদের ইমাম সাঁতরে গিয়ে মসজিদে আজান দিচ্ছেন। বিষয়টি দেখে আমরা মর্মাহত হয়েছি।

তিনি বলেন, এখানকার মানুষের নামাজের প্রতি আগ্রহ দেখে নৌকার ওপর বিশেষভাবে অস্থায়ী একটি ভাসমান মসজিদ তৈরি করে দিয়েছি। এখন থেকে মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করতে পারবেন। আগের মসজিদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি এই মসজিদের দায়িত্ব পালন করবে।

আকরামুল ইসলাম/এনএ