মায়ের কোল থেকে দুই মিনিটে নবজাতক চুরি
হারিয়ে যাওয়া নবজাতকের বাবা-মা
সিজারের মাধ্যমে তিন দিন আগে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন শিল্পী রবিদাস কমলি (২০)। এটি তার প্রথম সন্তান। আদর করে ডাকছিলেন ‘বুড়ি’। কতশত স্বপ্ন আঁকছিলেন চোখে। শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরের পর নবজাতক নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু তার আগেই সকালে হাসপাতালের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে হারিয়ে গেছে কমলির নাড়িছেঁড়া ধন।
নবজাতকের বাবা মাসুম রবিদাস নগরীর লক্ষ্মীপুর আইডি হাসপাতাল রবিদাসপাড়ার বাসিন্দা। জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
প্রসব বেদনা নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হন কমলি। ওই দিনই রাত ৮টার দিকে সিজারের মাধ্যমে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন কমলি। এরপর থেকেই নবজাতক নিয়ে হাসপাতালের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন তিনি।
একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় কমলি। তিনি জানান, সকালে তিনি বেডে শুয়ে ছিলেন। ঘুমে আচ্ছন্ন অবস্থায় বাচ্চাকে দুধ পান করাচ্ছিলেন। এ সময় ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পান। তিনি ভেবেছিলেন সঙ্গে থাকা মাসি বাচ্চার গায়ে হাত দিচ্ছেন। তিনি ঠান্ডা হাত বাচ্চার গায়ে দিতে নিষেধও করেন। আড়মোড়া ভেঙে যাওয়ায় তিনি দেখতে পান এক নারী বাচ্চার গায়ে হাত দিচ্ছেন। পরে ওই নারী তার মাসির সঙ্গে ভাব জমান। একপর্যায়ে তার মাসিও ঘুমিয়ে পড়েন। মাত্র দুই মিনিটের মধ্য নবজাতকে নিয়ে উধাও হয়ে যান ওই নারী।
বিজ্ঞাপন
অজ্ঞাত পরিচয় যে নারী নবজাতককে নিয়ে গেছেন তার বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি কমলি। ওই নারী তাকে জানিয়েছিলেন- তিনি রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে এসেছেন। ভালো না লাগায় এখানে আসছেন। চিকিৎসক না থাকলেই তিনি এসে কথাবার্তা বলতেন। এইভাবে তার মাসির সঙ্গে ওই নারী সখ্যতা গড়ে তোলেন।
এদিকে নবজাতককে ফিরে পেতে মরিয়া বাবা মাসুম রবিদাস। তিনি বলেন, আমার মা নেই। ঘরে মেয়ে নয়, মা ফিরে এসেছেন। এখন সেই মাকে হারিয়ে ফেললাম।
এর আগেও হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড থেকে নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গত কারণেই বাড়তি নিরাপত্তা জারি থাকে এই ওয়ার্ডে। তা সত্ত্বেও কীভাবে নবজাতক চুরি হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নবজাতকের স্বজনরা।
তবে নিরপত্তার ঘাটতি নেই বলে দাবি করেছেন ওই ওয়ার্ডে দায়িত্বরত হাসপাতাল কর্মীরা। নাম প্রকাশ না করে তারা বলেন, আজ শুক্রবার। এমনিতেই লোকবল কম। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে দুষ্কৃতকারী।
বিষয়টি থানায় জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, এ নিয়ে নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তারা হারিয়ে যাওয়া নবজাতক উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
রাজপাড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় নবজাতকের পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে। হারিয়ে যাওয়া নবজাতককে উদ্ধার ও এ ঘটনায় জড়িত নারীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
আরএআর