হ্রদ-পাহাড়ে ঘেরা রাঙামাটি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর

অন্যান্য পর্যটন মৌসুমের মতো চাপ না থাকলেও করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘রাজধানী’খ্যাত হ্রদ-পাহাড়ে ঘেরা রাঙামাটি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরবর্তী সময়ে ঝিমিয়ে থাকা পর্যটনশিল্পে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। 

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র খুলে দেওয়ায় রাঙামাটিতে পর্যটক সমাগম ঘটায় হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী, ট্যুরিস্ট বোটচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু এ খাতের সবাই কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

তবে আবাসিক হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যটক বাড়লেও হোটেল-মোটেল ভাড়া তুলনায়মূলক কমেছে। যার অন্যতম কারণ রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকের ৬০ শতাংশ রাত্রিযাপন না করে ফিরে যাচ্ছেন।

ঢাকা থেকে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা ফারজানা ইসলাম বলেন, আমরা ১০ জন নারীর ভ্রমণ দল রাঙামাটিতে এসে এখানকার বিভিন্ন পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। এরপর রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কের বরগাঙ নামক কটেজে প্রকৃতির মাঝে দুদিন বসবাসের পর বান্দরবানের নীলাচলের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। বান্দরবান ভ্রমণ শেষে ঢাকায় গন্তব্যে ফিরে কর্মক্ষেত্রে ফের যোগ দেব।

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন বোটঘাটের ব্যবস্থাপক মো. রমজান আলী বলেন, গত কয়েকদিনে শীতের তীব্রতা বাড়ায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা কাপ্তাই হ্রদে ঘোরাঘুরি কম করছেন। এতে করে ট্যুরিস্ট বোট ভাড়া কিছুটা কমেছে। তবে আবহাওয়া সহনশীল হলে এই সংকট কেটে যাবে। 

বিনোদনকেন্দ্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরবর্তী সময়ে ঝিমিয়ে থাকা পর্যটনশিল্পে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে

রমজান আলী বলেন, এখন প্রতিদিন আমাদের ঘাট থেকে ১৫-২০টি ট্যুরিস্ট বোট ভাড়া হয়। তবে শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে ৫০-৬০টির মতো ভাড়া হয়। সব মিলিয়ে করোনার সংকট কিছুটা হলেও কাটিয়ে রাঙামাটিতে পর্যটক সমাগমে প্রাণ ফিরেছে।

ট্যুরিস্ট বোটচালক বাবু চাকমা বলেন, প্রতিদিন কম বেশি ভাড়া হয়। তবে শুক্রবার-শনিবার কিছুটা চাপ থাকে। এ দিনে বোট ভাড়াও বেশি পাই। পর্যটকরা মূলত আগে সুবলং ঝরনায় যেত। তবে এখন যেহেতু ঝরনায় পানি নেই। তাই শহরের আশপাশের কাপ্তাই হ্রদে ঘুরে বেড়ান।

রাঙামাটির বাণিজ্যিক এলাকাখ্যাত রিজার্ভবাজারে অবস্থিত হোটেল মতি মহলের স্বত্বাধিকারী মো. শফিউল আজম বলেন, রাঙামাটিতে পর্যটকদের আনাগোনা গত কয়েক মাসের চেয়ে জানুয়ারিতে কিছুটা কমেছে। যার অন্যতম কারণ হলো ঠান্ডায় করোনার সংক্রমণের বাড়ার ভয়। যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা শোনা যাচ্ছে; তাই পর্যটকের চাপ কিছুটা কমেছে। তবে এখনো আমার হোটেলে ৫০ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। রাঙামাটিতে যে পরিমাণ পর্যটক ভ্রমণে আসেন; তারা তো রাত্রিযাপন করছেন না। মোট সংখ্যার মধ্যে ৪০ শতাংশ থাকেন বাকি ৬০ শতাংশ দিনে এসে দিনে চলে যান।

শীতের তীব্রতা বাড়ায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা কাপ্তাই হ্রদে ঘোরাঘুরি কম করছেন

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, করোনার ভয় উপেক্ষা করে ভ্রমণপ্রেমী পর্যটকরা এখন রাঙামাটি বেড়াতে আসছেন। তবে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। আমাদের এখন পর্যটন মোটেলের বুকিং থাকে ৫০ শতাংশের মতো। তবে অন্যান্য বছরের এই সময় বুকিং দিতে পারিনি পর্যটকদের। কারণ এই সময়ে বুক খালি থাকত না। করোনা এসে সেটি কমিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে শুক্রবার-শনিবারে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দিনে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে। অন্যান্য দিনে থাকলেও অনেকেই সকালে বেড়াতে এসে সারাদিন ঘোরাঘুারি করে সন্ধ্যায় চলে যান। যার কারণে হোটেল-মোটেলে পর্যটকদের চাপ কম।

এএম