১৯৯৯ সালের ৮ মার্চ। নানির সঙ্গে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থেকে রাজধানীর মহাখালী কড়াইল এলাকায় মামার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন ছয় বছরের তানজিমা। ঘটনাচক্রে সেখান থেকে হারিয়ে যান তিনি। পরে আরেকটি পরিবারে বড় হন। পরিবারটি তাকে বিয়েও দিয়েছে। এখন তিনি তিন সন্তানের জননী। এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে ২২টি বছর। অবশেষে আরজে কিবরিয়ার উপস্থাপনায় জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আপন ঠিকানা’র মাধ্যমে তানজিমা ফিরে পেয়েছেন বাবা-মাকে।

দীর্ঘ ২২ বছর পর মেয়েকে কাছে পেয়ে বাবা নূরুল হুদা এবং মা জোসনা বেগমের অশ্রুসিক্ত আলিঙ্গনের দৃশ্য আপ্লুত করেছে লাখো ফেসবুক ব্যবহারকারী দর্শককে। বৃহস্পতিবার (০৭ অক্টোবর) রাতে স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টস লিমিটেডের নির্মাণে আরজে কিবরিয়ার ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার হওয়া আপন ঠিকানার আপডেট ভিডিওতে দেখা যায় এমন দৃশ্যের। এর আগে ৩ অক্টোবর বিকেলে প্রচার করা হয় আপন ঠিকানার ৭৩তম পর্ব। যেখানে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন তানজিমা। ওই দিন মধ্যরাতেই তানজিমার পরিবারের সন্ধান পায় আপন ঠিকানা টিম।

তানজিমা জানান, ১৯৯৯ সালে ছয় বছর বয়সে নানি জাহানারা খাতুনের সঙ্গে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থেকে মহাখালীর কড়াইলে মামার বাড়িতে গিয়ে হারিয়ে যান। পরে শান্তিবাগ এলাকার গোকরান মিয়া নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা তানজিমাকে লালন-পালন করে বিয়ে দেন। বর্তমানে তানজিমা তিন সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে বনশ্রী এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন।

পরিবার ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত তানজিমা বলেন, পরিবারকে হারানোর পর অনেক কষ্ট করেছি। আশপাশের মানুষের অনেক কটুকথা সহ্য করেছি। অনেক কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে চেয়েছি যেন আমার বাবা-মাকে ফিরে পাই। এটিই ছিল আমার জীবনের স্বপ্ন। আজ আমার জীবনের সেরা উপহার আমার জন্মদাতা বাবা এবং গর্ভধারিণী মাকে পেয়েছি।

যে পরিবারে তিনি বড় হয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও ভোলেননি তানজিমা। বলেন, রাস্তায় পাওয়ার পর যারা নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করেছেন তাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। তাদের কাছে আমি চিরঋণী। একইসঙ্গে যার মাধ্যমে পরিবার ফিরে পেয়েছি সেই আপন ঠিকানা এবং কিবরিয়া ভাইকেও অশেষ ধন্যবাদ।

তানজিমার বাবা নূরুল হুদা বলেন, মেয়ে হারিয়ে যাওয়ার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঢাকা ছুটে গিয়েছিলাম। মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করেছি। ঢাকায় টানা দুই মাস থেকেছি শুধু মেয়েকে খোঁজার জন্য। যেখানে শুনেছি একটি মেয়ে পাওয়া গেছে সেখানেই ছুটে গেছি। আর সবসময় চেয়েছি আমার মেয়েটা যেন ভালো মানুষের কাছে বড় হয়। অবশেষে আজ আমাদের হারানো ধনকে ফিরে পেয়েছি। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া জানাই।

আরজে গোলাম কিবরিয়া সরকার বলেন, অনেকেই অবাক হন ভিডিও ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সফল হয়ে যাওয়া দেখে। আমি আশা করি, এই সফলতার সংখ্যা আরও বেশি অবাক করবে ভবিষ্যতে। স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টস লিমিটেডের উদ্যোগ আপন ঠিকানা সম্পর্কে মানুষজন এখন জানছে। যাদের কেউ হারিয়ে গেছে সে ধরনের পরিবার এখন এই পেজে প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকেন কবে তাদের মানুষটা এই অনুষ্ঠানে আসবে। আগামীতে আমাদের ভিডিওর সফলতা আরও কম সময়েই হবে, সেই দিনের অপেক্ষাতেই আমরা আছি।

এসপি