দেশের অন্যতম ধান-চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ। বিভিন্ন সংকটে এ জেলার ৪০ ভাগ চালকল বন্ধ হয়ে গেছে। লোকসান এড়াতে অনেক ব্যবসায়ী মিল বিক্রি করে বিকল্প ব্যবসায় ঝুঁকছেন। একের পর এক মিল বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়ছেন হাজারো শ্রমিক।

জানা গেছে, নওগাঁ বাংলাদেশের বৃহত্তর জেলার একটি। এ জেলায় এক বছরে তিন মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। এই তিন মৌসুমে প্রায় ২৮ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করে নওগাঁর কৃষকরা। এসব ধান কৃষকের কাছে থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিয়ে আসে মিলে। আর এই ধান ঘিরেই জেলায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রায় ১ হাজার ২৫০টি চালকল। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ সহায়তা নিয়ে এসব চালকল গড়ে তোলা হয়েছে। 

ব্যবসায়ীরা বল‌ছেন, এই মৌসুমে ধানের দাম বেশি থাকায় মিলাররা ধান কিনে চাল করতে পারছেন না। এখন ধানের দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ। বাজার অনুসারে ধান নিয়ে এসে চাল করতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। খরচের তুলনায় চালের বস্তায় ১০০-১৫০ টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে।

প্রতি‌যো‌গিতার বাজারে টিক‌তে না পারায় বে‌শির ভাগ মিল কারাখানা বন্ধ হ‌য়ে গে‌ছে। এসব কারখানায় কাজ করা হাজার হাজার নারী-পুরুষরা বেকার হয়ে পড়েছেন। আর এক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে আমদানি নির্ভরতাকে দোষারোপ করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

নওগাঁর সুলতানপুর এলাকার চাতাল শ্রমিক মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, চাতাল শ্রমিকরা এখন দুর্বিষহ দিন পার করছেন। আগে  যেসব মিলে ৭০-৮০ জন শ্রমিক কাজ করত এখন সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি মিলে ৭-৮ জন শ্রমিক কাজ করে।

নওগাঁ খিদিরপুর এলাকার আরও এক চাতাল শ্রমিক বলেন, এখন বেশিরভাগ বয়লার বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। সেখানকার হাজার হাজার শ্রমিক বেকার বসে আছে। তাদের জীবন কীভাবে চলবে? আর যে কারখানা চলছে সেখানেও হাতে গোনা কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছে।

জেলা চালকল মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, শুধু আমদানি নির্ভরতার কারণে দেশীয় চাতাল ব্যবসায়ীরা আজ পথে বসছে। জেলায় প্রায় আড়াই হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন। এসব ব্যবসায়ীর কাছে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা। চালকল বন্ধ হওয়ায় এসব ব্যবসায়ীরা দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন।

এসপি