স্ট্যাক ইয়ার্ডে প্রবেশ করতেই গাড়িপ্রতি দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা

বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার আগেই মালবাহী পরিবহনগুলোর ওজন বেশি হলেই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্ট্যাক ইয়ার্ডে। এতে স্ট্যাক ইয়ার্ডে প্রবেশ করতেই গাড়িপ্রতি দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা। প্রতিদিন গড়ে দুই পাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ গাড়ি স্ট্যাক ইয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

স্ট্যাক ইয়ার্ড থেকে উত্তোলিত টাকা থেকে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ এবং স্ট্যাক ইয়ার্ড রক্ষণাবেক্ষণের পর বাকি টাকা সেতু কর্তৃপক্ষের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়। তবে এর জন্য কোনো দরপত্র হয়নি।

বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সেতুর দুই পাড়ে স্ট্যাক ইয়ার্ড পরিচালনার জন্য সেতু কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) পদসহ ৩৩ জন লোকবল নিয়োগ দিয়েছে। তারা তিন শিফটে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিবছর এভাবেই সেতু কর্তৃপক্ষ দরপত্র ছাড়াই পরিবহন থেকে টাকা আদায় করছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমে নির্দিষ্ট ওজনের বেশি মালবাহী পরিবহনগুলোয় ঘুরিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্ট্যাক ইয়ার্ডে। পরে সেখানে পরিবহনের চালকরা শ্রমিকদের মাধ্যমে পরিবহনের মালামাল লোড-আনলোড করে পুনরায় সেতু পার হয়ে যান। এর আগে স্ট্যাক ইয়ার্ডে প্রবেশ করতেই দিতে হলো ৫০ টাকা। যতবার সেতুর ওজন স্টেশন থেকে পরিবহন ঘুরিয়ে স্ট্যাক ইয়ার্ডে পাঠানো হবে, ততবার ৫০ টাকা পরিশোধ করতে হবে চালকদের। স্ট্যাক ইয়ার্ডে প্রবেশ করতেই দেখা গেল একটা সাইনবোর্ড। তাতে লেখা রয়েছে, ‘স্ট্যাক ইয়ার্ড ব্যবহার লোডিং-আনলোডিং ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ফি ৫০ টাকা’।

বাড়তি টাকা পরিশোধ করছেন এক ট্রাকচালক

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর থেকে স্ট্যাক ইয়ার্ড ব্যবহারের জন্য কোনো বাড়তি টাকা দিতে হয়নি মালবাহী পরিবহনগুলোকে। ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর তখনকার রক্ষণাবেক্ষণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেটালজিক্যাল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি অব চায়না (এমসিসিসি) প্রথম স্ট্যাক ইয়ার্ডের নামে পরিবহন থেকে টাকা আদায় শুরু করে। এরপর থেকে সেতু কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তত্ত্বাবধানে স্ট্যাক ইয়ার্ড ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে টাকা আদায় করছে। এতে কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয় না। এ ছাড়া স্ট্যাক ইয়ার্ডে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাছ থেকেও তাদের কাজের একটি অংশের টাকা আদায় করা হচ্ছে।

আরও জানা যায়, দুই পাড়ের স্ট্যাক ইয়ার্ডে জমে থাকা পাথরগুলো উন্মুক্তভাবে বিক্রির টাকা সেতুর সাইট অফিসের কর্মকর্তাদের পকেটে চলে যায়। দুই মাস আগে সেতুর পশ্চিমে জমে থাকা পাথর স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে প্রায় ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়।

দিনাজপুরের ট্রাকচালক আবদুল মজিদ অভিযোগ করে জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর ওজন স্টেশনে খানাখন্দ আর গর্তের কারণে গাড়ির ওজন কম থাকলেও ঝাঁকিতে ওজন বেড়ে যায়। এতে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় স্ট্যাক ইয়ার্ডে। এতে প্রবেশ করতেই গুনতে হয় ৫০ টাকা।

সেতু এলাকায় যে পরিবহনগুলোর ওজন বেশি হচ্ছে, সেগুলো থেকে রসিদের মাধ্যমে ৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। টাকাগুলো নিয়মিত বিবিএর প্রধান কার্যালয়ের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য ঠিকাদার নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক, বঙ্গবন্ধু সেতু

সিরাজগঞ্জের সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের চালক সাগর বলেন, দুবার ঘুরেছি ওজন বেশি হওয়ায়। দুবারই স্ট্যাক ইয়ার্ডে টাকা দিতে হয়েছে। এ টাকা অবৈধভাবে আদায় করছে বলে জানান তিনি।

অন্য চালকরা জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতে তো টাকা দিতেই হয়। আবার লোড-আনলোডের জন্য এখানে এসে বাড়তি টাকা গুনতে হয়। চালকদের পদে পদে এই হয়রানি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া স্ট্যাক ইয়ার্ডের শ্রমিকরাও বাড়তি টাকা না দিলে মালামাল লোড-আনলোড করেন না। এখানেও সিন্ডিকেট রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে স্থাপিত স্ট্যাক ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম বলেন, প্রতিদিন দুই পাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ গাড়ি স্ট্যাক ইয়ার্ডে প্রবেশ করে। এতে গাড়িপ্রতি ৫০ টাকা করে আদায় করা হয়। আর এই স্ট্যাক ইয়ার্ড পরিচালনার জন্য দুই পাড়ে সেতু কর্তৃপক্ষের ৩৩ লোকবল নিয়োজিত রয়েছেন। তবে পরিবহন থেকে টাকা আদায়ের জন্য কোনো দরপত্র হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো কিছু জানি না। সেতু কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলা নিষেধ।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) বঙ্গবন্ধু সেতুর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেতু এলাকায় যে পরিবহনগুলোর ওজন বেশি হচ্ছে, সেগুলো থেকে রসিদের মাধ্যমে ৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। টাকাগুলো নিয়মিত বিবিএর প্রধান কার্যালয়ের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য ঠিকাদার নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

এনএ