বারোমাসি পেয়ারা বাগান করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন সাবু ও মরফিদুল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৬০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল আকৃতির পেয়ারা বাগান। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে স্থানীয় ৩৫ যুবকের। সুস্বাদু হওয়ায় বাগান থেকেই পেয়ারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা। 

জানা গেছে, ফল বিক্রি করে সংসার চালাতেন ঘোড়াঘাট উপজেলার বলগাড়ি এলাকার সাবু ও মরফিদুল। তারা সম্পর্কে ভায়রা ভাই।  শহরে ফল বিক্রি করতে গিয়ে বাগান করার চিন্তা আসে দুজনের মাথায়। ২০১৪ সালে ছয় বিঘা জমি লিজ নিয়ে গড়ে তোলেন বারোমাসি জাতের পেয়ারার বাগান। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের।

ছয় বছরে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল আকৃতির পেয়ারার বাগান। যেখান থেকে প্রতি বছর দেড় থেকে দুই কোটি টাকার পেয়ারা বিক্রি করছেন তারা। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বছর তাদের অর্ধকোটি টাকা আয় হয়। বাগান করে শুধু তারাই স্বাবলম্বী হয়নি, কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে স্থানীয় ৩৫ বেকার যুবকের। 

সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় প্রতিদিন বাগান থেকে পেয়ারা কিনতে আসছেন বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা। বাগান তৈরি করতে কিছুটা বেগ পেতে হলেও এখন পেয়ারা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন তারা।

এদিকে পেয়ারার বাগান বাড়াতে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। ৬০ বিঘা জমিতে গড়ে উঠা পেয়ারা বাগানে গাছ রয়েছে ১১ হজার। সেখান থেকে প্রতিদিন পেয়ারা বিক্রি হয় ৪০-৫০ মণের বেশি। আর এসব পেয়ারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। 

পেয়ারা বাগানে কর্মরত নাহিদ, শাকিল, নিবিড় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকায় আগে কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল না। এখানে বিশাল পেয়ারার বাগান গড়ে উঠেছে। আমরা একসঙ্গে ৩০-৩৫ জন শ্রমিক কাজ করতে পারি। প্রতি মাসে এখান থেকে ১০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছি।

পঞ্চগড় থেকে পেয়ারা কিনতে এসেছেন পাইকারী ব্যবসায়ী আমজাদ আলী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই বাগান থেকে ১২ মাসেই পেয়ারা পাওয়া যায়। সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমি এখান থেকে ১৮-২০ মণ পেয়ারা কিনে বিভিন্ন এলাকায় পাঠায় এবং নিজেও বিক্রি করি।

সাবু ও মরফিদুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দুজন আগে ফলের ব্যবসা করতাম। ফল বিক্রির জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। ঢাকায় ফল বিক্রি করতে গিয়ে পাশের দোকান থেকে একটা পেয়ারা কিনে খাই। পেয়ারাটি খেতে খুবই মিষ্টি লেগেছিল। পরে জানতাম পারলাম পেয়ারাটি নাটোর থেকে এসেছে। 

২০১৪ সালে আমরা দুজন নাটোর থেকে পেয়ারার চারা নিয়ে এসে ছয় বিঘা জমিতে বাগান করি। সেখান থেকে ফলন ভালো পাওয়ায় আমরা পরে আরও ৫৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেয়ারা চাষ শুরু করি। এখন প্রতিবছর বাগান থেকে দেড় কোটি টাকার পেয়ারা বিক্রি করছি। ১২ মাস আমরা বাগানের পেয়ারা বিক্রি করতে পারি।

ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘোড়াঘাট উপজেলাটি বরেন্দ্র এলাকার। এখানে পানি জমে থাকে না। তাই ফল চাষের জন্য উপজেলাটি বেশ উপযোগী। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এতে ঘোড়াঘাটে পেয়ারা বাগান বাড়ছে। পানি জমে না থাকার কারণে এখানকার পেয়ারাটি খেতে খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু। কেউ যদি এ ধরনের বাগান করতে চায় তাহলে আমরা তাদের সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাব।

এসপি