নির্বাচনী জনসভায় যাওয়ায় ৩ কৃষকের ফসল কাটল দুর্বৃত্তরা
‘ভাই, আমারে কেউ এক বোতল বিষ দেন। আমি খেয়ে মরে যাই। বেঁচে থেকে কী হবে, আমার সব শেষ হয়ে গেছে রে।’ কেঁদে কেঁদে এভাবে বলছিলেন কৃষক রহিম বাদশার স্ত্রী তাহেরা খাতুন।
শেরপুর সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের নাওভাঙা গ্রামের বাসিন্দা রহিম। রোববার (২৪ অক্টোবর) ভোরে দুর্বৃত্তরা তার সবজি গাছ কেটে ফেলে। উক্ত ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়েই তিনি কাঁদেন ও বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তাহেরা খাতুন বলেন, আমার এক ছেলে কলেজে পড়ে। সে সামনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। তার লেখাপড়া খরচের জন্য আমরা ২৫ হাজার টাকা ধারদেনা করে ১৫ শতাংশ জমি আবাদ করি। সেখানে শিম, লাউ, ঝিঙাসহ বিভিন্ন সবজি গাছ ছিল। কিন্তু শত্রুতা করে আমার সব শেষ করে দিল।
তাহেরা অভিযোগ করে আরও বলেন, এর আগেও বর্তমান ইউপি মেম্বার কালু আমার এক ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা করে। আমাদের ধারণা, এই কাজ সে করেছে। কারণ, গতবার আমরা তার নির্বাচন করিনি। এবারও আগামী ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচন হবে। তাই আমার স্বামী ও দেবর গত শুক্রবার অন্য মেম্বার প্রার্থীর জনসভায় গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে বর্তমান ইউপি মেম্বার কালু তাদের মারধর করে, নানা হুমকি প্রদর্শন করে।
বিজ্ঞাপন
তাহেরার স্বামী রহিম বাদশা বলেন, আমার কোনো শত্রু নাই। আমি প্রতিবছর লিজ নেওয়া জমিতে সবজি আবাদ করি। গাছে সবজি এলে প্রতিবেশীদের বাড়িতে বিক্রি করি। কে আমার এত বড় সর্বনাশ করল? আমি কি দোষ করেছি? আমাদের সার, বিষ, জৈবসার সব কিনতে হয়। কতগুলো টাকা খরচ করেছি। এক রাতে আমার সব শেষ করে দিল। আমার পরিবারে ৬ জন সদস্য। ভেবেছিলাম সবজি বিক্রি করে সংসার চালাব। এখন তাদের পেটে কি দিব? তারা কি খাবে?
রহিম বাদশার ভাই কৃষক ইসমাইল বলেন, প্রতিবার ইউপি নির্বাচন এলেই একটি গোষ্ঠী আমাদের সঙ্গে এমন করে। আমরা গরিব-নিরীহ মানুষ। আমরা রাজনীতি বুঝি না। আমিও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২০ শতাংশ জমিতে সবজি আবাদ করেছিলাম আমি। গত শনিবার রাতে আমার সব গাছ কেটে দিয়েছে। আমি পথে বসে গেছি। এর আগেও গরুর খাবারে (চাড়িতে) কে যেন বিষ দিয়েছিল। খাবার খেয়ে আমার ৮টি গরু প্রায় মরতে বসেছিল।
রহিম ও ইসমাইলের চাচা কৃষক মগর আলী বলেন, আমি বয়োবৃদ্ধ মানুষ। গতরে শক্তি নাই। কামকাজ করবার পাই না। তাই সাত-আট হাজার টাকা খরচ করে সবজি আবাদ করেছিলাম। আমার ভাতিজাদের গাছসহ শত্রুতা করে আমারও সবজি গাছগুলো কেটে দিছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
স্থানীয় এলাকাবাসী আব্দুল সামাদ বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমরা কৃষি আবাদ করে খাই। এগুলো না করতে পারলে আমরা কী করে খামু? আমাদের না খেয়ে মরতে হইব।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত রৌহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুজ্জামান সোহেল বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সবাই হতদরিদ্র। যারাই তাদের ক্ষতি করে থাকুক, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাকে স্থানীয় এলাকাবাসী মুঠোফোনে সব জানিয়েছে। আমি ইতোমধ্যে বিষয়টি শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানিয়েছি। উনি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবেন।
শেরপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আহমেদ ঢাকা পোস্টকে জানান, এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জাহিদুল খান সৌরভ/এনএ