চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামে স্বামী জামাল হোসেনকে ঘুমের ওষুধ ও বালিশচাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী ফাতেমা আক্তারকে (৩৪) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

রোববার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম ফারহানা ইয়াসমিন এ রায় দেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৪ এপ্রিল ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে তার স্বামী মৃত জামাল হোসেনের পারিবারিক বিষয়ে ঝগড়া-বিবাদ হয়। সন্তানদের সামনে স্বামী ফাতেমাকে মারধর করায় অসম্মানবোধ করেন। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীকে প্রাণে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন। পরদিন ১৫ এপ্রিল পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ১১টায় বাজার থেকে স্বামী ঘরে এলে জন্ডিসের তরল ওষুধের সঙ্গে ৮টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে রাখেন। ওই ঔষধ পান করে রাতে স্ত্রী ফাতেমাসহ তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।

রাত আনুমানিক ৩টার দিকে জামাল হোসেন অচেতন হয়ে পড়লে মুখে বালিশচাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন ফাতেমা। ঘটনাটি গোপন করার জন্য ফাতেমা অন্য ঘর থেকে তার ছেলে জাহিদুল ইসলাম ফাহিমকে (১৫) ঘুম থেকে উঠিয়ে তার বাবা মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানান। ছেলেকে ফাতেমা শিখিয়ে দেন, তার বাবার সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে দিনে, ফলে তার মৃত্যুর ঘটনায় তাদের সন্দেহ করবে সবাই। এ জন্য মা ও ছেলে একসঙ্গে বাড়ির পাশে জামালকে মাটিচাপা দেয়।

পরদিন সকালবেলায় ফাতেমা প্রচার করেন তার স্বামী ঢাকায় চাকরির জন্য গিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি জামাল হোসেনের পরিবারের সন্দেহ হলে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে সন্ধান পায়নি। পরে ফাতেমাকে দিয়ে ২৮ এপ্রিল শাহরাস্তি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করে।

৩০ এপ্রিল দুপুরে ফাতেমা তার স্বামীর নিকটাত্মীয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. আমির হোসেনের কাছে পুরো ঘটনার বিবরণ বলেন। আমির হোসেন ঘটনাটি শাহরাস্তি থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে তাদের থানায় নিয়ে যায় এবং জিজ্ঞাসাবদের এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে জামাল হোসেনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ওই দিনই আমির হোসেন বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় ফাতেমা আক্তার ও তার ছেলে জাহিদুল ইসলাম ফাহিমকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।

শাহরাস্তি থানা পুলিশ ওই দিনই ফাতেমা আক্তার ও তার ছেলেকে আদালতে পাঠান। গত ৬ বছর ফাতেমা চাঁদপুর জেলা কারাগারে এবং ছেলে জাহিদুল ইসলাম শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে থেকে এখন জামিনে আছেন। জাহিদুলের মামলাটি পৃথক আদালতে চলমান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন শাহরাস্তি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সমির মজুমদার তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি বদিউজ্জামান কিরণ জানান, মামলাটি আদালতে ৬ বছর চলমান থাকা অবস্থায় ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামির উপস্থিতিতে বিচারক আজ এই রায় দেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর, কাজী জুম্মান ও ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম।

শরীফুল ইসলাম/এনএ