একই এলাকার নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কাছে দুধ বিক্রি করে সেই আয় দিয়ে পরিবারের খরচ চালান দুধ বিক্রেতা মো. বেলাল হোসেন। পরিবার নিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করতে সবাই ব্যস্ত কতভাবে। নিজের সংসারের খরচ জোগাতে বেলাল বেছে নিয়েছেন দুধ বিক্রির ব্যবসা।

মো. বেলাল হোসেন (৫৭) খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউপির মুসলিম পাড়া এলাকার বাসিন্দা। পরিবারে তার ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ে রয়েছে। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, দুই ছেলেকেও বিয়ে করিয়েছেন তিনি। বাকি দুই ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা করছে।

জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কাছ থেকে ঘুরে ঘুরে দুধ কিনে বেলাল তা নিয়ে আসেন জেলা শহরে। এখানে এনে পৌর এলাকার মাস্টারপাড়া গ্রামে তিনি মানুষের কাছে দুধ বিক্রি করেন। সবার ঘরের সামনে গিয়ে বোতলে ভরে হাতে তুলে দেন। একই গ্রামের মধ্যে স্থানীয় লোকের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাড়া বাসায় থাকা মানুষের কাছেও বিক্রি করেন তিনি।

এই গ্রামে চাকরির সুবাদে অনেক মানুষ বসবাস করেন। আবার চলে যান। কিন্তু দুধ বিক্রেতা বেলাল হোসেনের পরিবর্তে কেউ দুধ বিক্রি করতে আসেন না। ৩১ বছর ধরে তিনি এই গ্রামে দুধ বিক্রি করেন।

বিয়ের পর তিনি নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। পরে এই দুধ ব্যবসার কথা মাথায় আসে তার। তখনই নেমে পড়েন এই কাজে। পরিশ্রম আর একাগ্রতার কারণে ৩১ বছর কাটিয়ে দিলেন এই ব্যবসায়।

১৯৯০ সালে প্রথম তিনি নিজের গ্রাম থেকে ঘুরে ঘুরে দুধ কিনে জেলা শহরের এই গ্রামে এনে বিক্রি করতেন। তিনি যখন প্রথমে দুধ বিক্রি শুরু করেন, তখন ১০ টাকায় কেজি কিনে বিক্রি করতেন ১২ টাকায়। প্রতিদিন বিক্রি করতেন ৬০ থেকে ৭০ কেজি। লাভ হতো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এই আয় দিয়েই চলত তার সংসার।

বর্তমানে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় কিনে বিক্রি করেন ৯০ টাকায়। দৈনিক লাভ হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। কিন্তু আগের তুলনায় দুধের পরিমাণ অনেক কমে গেছে বলে জানান তিনি। পুরো গ্রাম ঘুরে ২০ থেকে ৩০ কেজির বেশি পাওয়া যায় না। ফলে আয় কমে গেছে অনেক।

দুধ কেনাবেচার পাশাপাশি বাড়তি সময়ে তিনি ৪ কানি (১৫৯ শতাংশ) জমিতে ধান চাষ করেন। সেই ধান দিয়ে চলে পুরো বছরের খোরাকি। এতে চাল কেনা থেকে মুক্তি পান তিনি।

এই ব্যবসা করে তিনি অর্জন করেছেন কিছু সম্পত্তি। তা থেকেও বর্তমানে আসে কিছু আয়। সব মিলিয়ে পরিবার নিয়ে সুখে আছেন বলে জানা যায়।

একই গ্রামে ৩১ বছর ধরে দুধ বিক্রি করতে গিয়ে কখনো কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি তাকে। যারা দুধ কেনেন, তারাও খুব আপন করে নিয়েছেন বেলালকে। অন্য কেউ এই গ্রামে দুধ বিক্রি করতে এলে তাদের কাছ থেকে কেউ দুধ সংগ্রহ করে না। তাই তিনি একাই ৩১ বছর ধরে টিকে আছেন এই এলাকায়।

দুধ ক্রেতা তাপস ত্রিপুরা বলেন, আমি অনেক বছর ধরে তার কাছ থেকে দুধ কিনি। অন্য অনেকের চেয়ে তার দুধ ভালো মানের। তাই তার কাছ থেকে দুধ কিনি। বাসায় এনে দিয়ে যান তিনি। আর কারও থেকে দুধ কেনে না এই গ্রামের মানুষ। তিনি সততার সঙ্গে এ বিশ্বাস তৈরি করেছেন।

ক্রেতা বিথী হাওলাদার বলেন, আমি চার বছর ধরে তার কাছ থেকে দুধ কিনি। তিনি অনেক যত্নসহকারে বাসায় দিয়ে যান। কখনো তার কাছে অন্যায় কিছু দেখিনি। তিনি কখনো দুধে কিছু মেশান না। ফলে দুধ খেয়ে অনেক মজা পাওয়া যায়। খেতে খুব স্বাদও।

কথা হয় মো. বেলাল হোসেনের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমি ৩১ বছর ধরে এই গ্রামে দুধ বিক্রি করি। অন্য কোথাও যেতে হয় না। মাইসছড়ি থেকে দুধ এনে তা এখানে দিয়েই শেষ হয়ে যায়। এখানকার মানুষ আমাকে খুব ভালোবাসে। আমিও তাদের কখনো ঠকাই না, মিথ্যা বলি না। দুধের সঙ্গে কিছু মেশাই না।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু এই ব্যবসা দিয়েই আমার সবকিছু চালাতে হয়, তাই আমি চেষ্টা করি সৎভাবে ব্যবসা করতে। কারও যেন মনে কষ্ট না হয়। তাই সবাই আমাকে বিশ্বাস করে। আমিও যত বছর এই ব্যবসায় থাকি, চেষ্টা করব সবার মন রক্ষা করে ব্যবসা করতে।

এনএ