পঞ্চগড়ে সমতল ভূমিতে শুরু হয়েছে সুস্বাদু ও রসালো কমলার চাষ

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে সমতল ভূমিতে চা চাষের পর এবার শুরু হয়েছে সুস্বাদু ও রসালো কমলার চাষ। জেলার পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই শখের বসে চাষ করছেন কমলা। বাড়ির আঙিনা বা পাশের ছোট জমিতে কমলার বাগান গড়ে তুলে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাই বিভিন্ন এলাকায় কীটনাশক ছাড়াই বিষমুক্ত উপায়ে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে এই কমলার চাষ।

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কমলার চাষ হচ্ছে পঞ্চগড়ের সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলায়। এই দুই জেলার মাটি কমলা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিন দিন বাড়ছে এ কমলার চাষ। অল্প খরচে বেশি লাভ এবং রাসায়নিক সার ছাড়া জৈব সার প্রয়োগ করে বিষমুক্ত উপায়ে চাষ হচ্ছে এ কমলার

আজ সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন বাগানের গাছে ঝুলছে এমন থোকা থোকা কমলা।

জানা যায়, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কমলার চাষ হচ্ছে পঞ্চগড়ের সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলায়। এই দুই জেলার মাটি কমলা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিন দিন বাড়ছে কমলার চাষ। অল্প খরচে বেশি লাভ এবং রাসায়নিক সার ছাড়া জৈব সার প্রয়োগ করে বিষমুক্ত উপায়ে চাষ হচ্ছে এ কমলার। তা ছাড়া ফলটির ব্যাপক চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়ায় এ জেলায় দিন দিন বাড়ছে কমলার চাষ।

নিজের বাগানের কমলা দেখছেন কমলাচাষি হাবিবুন নবী প্রধান

স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ জেলার বাগানের উৎপাদিত কমলার আকার, রং ও স্বাদ ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি কমলার মতো হওয়ায় দ্রুত এটি সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন চাষিরা ঝুঁকছেন রসালো এ কমলা চাষে। এরই মধ্যে অনেকে কমলা চাষে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীও হয়েছেন। ভারতের কিছু জাতের চেয়েও এখানকার উৎপাদিত কমলা অনেক সুস্বাদু হওয়ায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই কিনে নেন এখানকার কমলা।

জেলার পাঁচটি উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে কমলার বাগান। ছোট এসব বাগানে আশানুরূপ কমলার ফলন ভালো হওয়ায় খুশি বাগান-মালিকরা। অল্প দিনেই ফলটি জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে চাষিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছি

মিজানুর রহমান, উপপরিচালক, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

কৃষি কার্যালয় জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলায় চলতি বছরে মোট ৩৭ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭৭ মেট্রিক টন। তবে লাভ বেশি ও ফলন ভালো পাওয়ায় কৃষকরা কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। 

এ বিষয়ে জেলার সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বামনপাড়া এলাকার কমলাচাষি হাবিবুন নবী প্রধান জানান, আমার বাগানের প্রায় ৫০০ গাছে কমলা ধরেছে। কমলার অনেক সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় পাইকাররা বাসায় এসে আমার বাগান থেকে কমলা কিনে নিয়ে যান। আমার কমলা বাগান দেখে এলাকার অনেক কৃষক এখন কমলা চাষ শুরু করেছেন।

পঞ্চগড়ে সমতল ভূমিতে উৎপাদিত রসালো ও সুস্বাদু কমলা

একই কথা জানান জেলার চাকলার হাট ইউনিয়নের সিদ্দিকী টি স্টেটের মালিক প্রবাসী মিজানুর সিদ্দিকী, আমি আমার চা বাগানের পাশে পতিত জমিতে কমলা চাষ করেছি। গত বছর থেকে ফল পাওয়া শুরু হলেও এ বছর ফলন ভালো পেয়েছি। ভবিষ্যতে বাগানের সম্প্রাসরণের জন্য কাজ করছি৷ তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে এই সুস্বাদু কমলা রপ্তানি করতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে কমলার বাগান। ছোট এসব বাগানে আশানুরূপ কমলার ফলন ভালো হওয়ায় খুশি বাগান-মালিকরা। অল্প দিনেই ফলটি জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে চাষিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছি।

এনএ