আজিজুল, পারভেজ ও হৃদয় তিন বন্ধু। এর মধ্যে ঋণগ্রস্ত হয়ে আজিজুল ও হৃদয় অপর বন্ধু পারভেজকে খুন করে তার অটোভ্যানটি ১০ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করেন। মাত্র ১০ হাজার টাকার অটোভ্যান ছিনিয়ে নিতে দুই বন্ধু মিলে অপর বন্ধুকে হত্যা করেছেন। 

শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক হোসেনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা স্বীকার করেন তারা। জবানবন্দি  দেন ওই দুই বন্ধুসহ চারজন। জবানবন্দি শেষে আদালতের নির্দেশে তাদের জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, আজিজুল, পারভেজ এবং হৃদয় তিন বন্ধু। পারভেজ ভ্যান চালাতেন। ভ্যানটি আধুনিক মোটর লাগানো অটোভ্যান। আজিজুল ও হৃদয় ধার দেনা করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই ঋণ মেটাতে সুদে টাকা ধার নেন। পাওনাদার সুদের টাকা শোধ করতে চাপ দিলে আজিজুল ও হৃদয় টাকার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। কোথাও কোনো ব্যাবস্থা করতে না পেরে তাদের চোখ পড়ে অপর বন্ধু পারভেজের অটোভ্যানের ওপর। এটি হাতিয়ে নিয়ে বিক্রি করে তারা টাকা পেতে চান। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করেন। 

গত ১৩ অক্টোবর রাতে বন্ধু পারভেজকে নিয়ে পালাগান শুনতে যান তারা। পালাগানের কথা বলে অটোভ্যানসহ আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে নিয়ে কোমল পানিতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরে গলায় রশি দিয়ে পারভেজকে হত্যা করেন তারা। মরদেহটি একটি ধানক্ষেতের মধ্যে নিয়ে রাখেন হৃদয় ও আজিজুল। পরে পারভেজের অটোভ্যানটি ভাঙ্গায় নিয়ে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী আব্দুল মোল্লার কাছে ১০ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করেন ওই দুই বন্ধু। ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী আব্দুল মোল্লার কাছ থেকে ওই অটোভ্যানটি ১০ হাজার ৫০ টাকায় কিনে নেন ফজলু শেখ।

নিহত পারভেজ মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চর জান্নাত ইউনিয়নের মুন্সীকান্দী গ্রামের মো. বাবুল ফকিরের ছেলে।  পারভেজ  বিবাহিত এবং এক  ছেলের বাবা।

এ ঘটনায় ১৫ অক্টোবর নিহত পারভেজের বাবা বাবুল ফকির বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পারভেজের বাবা বাবুল ফকির বলেন, গত ১৪ অক্টোবর দুপুর ফরিদপুরের ভাঙ্গার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের দরগা বাজারের কাছে চরগজারিয়া গ্রামে আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে একটি ধানক্ষেত থেকে পুলিশ পারভেজের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে আমি মরদেহ শনাক্ত করি। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বলেন,  তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে পারভেজ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তার বন্ধু শিবচরের রাজারচর ইউনিয়নের গোবিন্দ মাদবরের গ্রামের আজিজুল মুন্সীকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একই দিনে ওই ইউনিয়নের শরিফকান্দি গ্রাম থেকে অপর বন্ধু হৃদয় মাতুব্বরকে (২৩) গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ভাঙ্গা পৌরসভার কাফুরিয়া সদরদী মহল্লার বাসিন্দা ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী আব্দুল মোল্লা (৩৬) এবং ভ্যান ক্রেতা ফজলু শেখকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়। তারা সবাই শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

আরএআর