ইতোমধ্যে লঞ্চটির ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ। এখন ইস্পাত, লোহা আর কাঠ কাটার শব্দও শোনা যায় না। কমেছে উল্কার ঝলকানি। নকশার কাজও শেষ। বাকি রয়েছে শুধু রঙের প্রলেপ আর সাজসজ্জার কাজ। তবে কবে নাগাদ যাত্রী পরিবহন শুরু হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে উদ্বোধন হতে পারে আলোচিত বিলাসবহুল নৌযানটি।

কিন্তু একসময়ের সাড়াজাগানো সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন এমভি সুরভী-৭ লঞ্চটি নতুন রূপে ও আঙ্গিকে ‘এমভি সুরভী-১০’ নামে নদীর বুকে ভাসানোর কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কর্তৃপক্ষ। কারণ, যাত্রীমহলে জনপ্রিয়তা পাওয়া নামটি মুছে ফেলতে চাইছে না লঞ্চ কোম্পানিটি।

এরই মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও জানিয়ে দিয়েছে তারা, সেই পুরোনো জনপ্রিয়তা আর যাত্রীর চাহিদার কথা মাথায় রেখেই সুরভী-৭ নামে আবার চালু হবে লঞ্চটি।

ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার সোহেল রানা বলেন, আপনারা জানেন, সুরভী-৭ লঞ্চটি ছিল খুব জনপ্রিয় একটি নৌযান। সেই জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই আগের নাম বহাল রাখা হয়েছে ‘লাকি সেভেন’। যদিও মাঝখানে সুরভী-১০ নাম করা হয়েছিল।

বর্তমানে যাত্রীদের মাঝে যেসব চাহিদা রয়েছে, তা মাথায় রেখেই লঞ্চটি তৈরি করা হয়েছে। পুরাতন সুরভী-৭ আর নতুন সুরভী-৭-এর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এখন লিফট যুক্ত করা হয়েছে। এতে রোগী ও যাত্রীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে লঞ্চে ওঠানামা করতে পারবে। কেবিনের ডেকোরেশন নতুন করে করা হয়েছে। আগে ভিআইপি কেবিন, ডুপ্লেক্স ছিল না, এখন যুক্ত করা হয়েছে।

সোহেল রানা বলেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য এই লঞ্চে সকল আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। যাত্রীদের জন্য টেলিভিশন, এসি ও ফ্রি ওয়াই-ফাই থাকবে। যাত্রীসেবায় আধুনিক প্রশিক্ষিত টিম কাজ করবে। সরকারি সনদপ্রাপ্ত মাস্টার, সুকানি থাকেব।

লঞ্চের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিনমাস্টার ব্রিজ থেকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। রাতের অন্ধকার ও কুয়াশা ভেদ করে চলাচলের জন্য বসানো হয়েছে উন্নত মানের রাডার ও জিপিএস। নদীর ডুবোচর ও পানির পরিমাণ নির্ধারণ করে চলতে বসানো হয়েছে ইকো সাউন্ডার এবং আপৎকালীন সময়ে আশপাশের নৌযানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বসানো হয়েছে ভিএইচএফ রেডিও। সুরভী-৭ লঞ্চের চারপাশে যুক্ত করা হয়েছে নেভিগেশন ক্যামেরা। যাত্রী নিরাপত্তায় থাকছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

সরেজমিনে শনিবার (৩০ অক্টোবর) বরিশাল শহরের উপকণ্ঠ বেলতলা খেয়াঘাটে সুরভী শিপিং লাইন্সের ডকে দেখা গেল শেষ ধাপের কাজ চলছে।

পেইন্টিং সুপারভাইজার জামাল হোসেন বলেন, রঙের কাজ অল্প বাকি আছে। সেটুকু শেষ হলেই পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে লঞ্চটি। এ ছাড়া কেবিন, ইঞ্জিন রুম, বেলকনিসহ সবকিছুর কাজ শেষ। দুই বছরের বেশি সময় ডকে নির্মাণকাজ শেষে নদীতে নামবে লঞ্চটি। এটি এখনকার সময়ের সবচেয়ে আধুনিক হবে বলে মনে করি।

সুরভী শিপিং লাইন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর ঢাকার সদরঘাটে নোঙর করে থাকা অবস্থায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয় সুরভী-৭ লঞ্চ। আগুন নেভানোর পর সেখান থেকে লঞ্চটিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ ডকইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। ৩০ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে আবারও লঞ্চে আগুন ধরে যায়। পরপর দুটি ঘটনায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও লোকসানের মুখে পড়ে কোম্পানি।

ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী বিলাসবহুল সুরভী-৭ লঞ্চটি আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর হাসনাবাদ ডকইয়ার্ড থেকে বেলতলা খেয়াঘাটের ডকইয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়। শুরু হয় নতুন উদ্যমে ডিজাইনের কাজ। নিয়োগ দেওয়া হয় দক্ষ প্রকৌশলী। তারা নতুন আঙ্গিকে লঞ্চটি তৈরি করেন। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ছাড়া আর কোনো অবকাঠামো সুরভী-৭-এর নেই। সবকিছুই নতুন।

সুরভী-৭ লঞ্চটিতে ১৫০টি কেবিন ছিল। আর ডেকে ১ হাজার ৭০০ যাত্রী যাতায়াত করতে পারত। বর্তমানেও ধারণক্ষমতা আগের মতোই রয়েছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ