সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল, সে-ই চলে গেল আগে
চার মেয়ের পর মায়ের কোলজুড়ে এসেছিল এক ছেলে সন্তান। নাম তার ফরহাদ হোসেন (৭)। হতদরিদ্র পরিবারের ছোট ছেলে ফরহাদ সবার খুব আদরের ছিল। কিন্তু সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল, সে-ই চলে গেছে সবার আগে। এক দূর্ঘটনায় ফরহাদকে হারিয়ে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। মা পারভীন বেগমকে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে। আর বাবা টিপু মণ্ডল ছেলের শোকে পাগলপ্রায়।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) তিন পরিবারের তিন মেয়ে ও এক ছেলে শিশু পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নওগাঁ সদর উপজেলার আরজি-নওগাঁ নামা শেরপুর এলাকায় পানিতে এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে টিপু মণ্ডলের মেয়ে সুরাইয়া (১০) ও ছেলে ফরহাদ হোসেন (৭), আনোয়ার হোসেনের ছেলে আশা (১১) ও আব্দুস সালামের মেয়ে খাদিজাসহ (৯) আরও দুই শিশু রোদোয়ান ও রাজিয়া গ্রামের মাঠে নালা (ড্রেন) থেকে কাদামাটি তুলে খেলছিল। পাশেই একটি পুকুর। সংস্কার করায় গত বছর থেকে সে পুকুরে কেউ গোসল করে না। খেলা শেষের দিকে রোদোয়ান ও রাজিয়া বাড়ি চলে আসতে চাই। এ সময় বাড়িতে আসার জন্য অন্যরাও কাদা পরিষ্কার করতে পুকুরে নামে। পুুকুরে নামার পর সুরাইয়া, ফরহাদ হোসেন, আশা ও খাদিজা পানিতে তলিয়ে যায়। পরে রোদোয়ান ও রাজিয়া বাড়ি গিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের জানালে দুপুর দেড়টার দিকে চার শিশুকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে। শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় চার শিশুকে কবর দেওয়া হয়।
জানা যায়, পারভীন বেগম ও টিপু মণ্ডল দম্পতির চার মেয়ের পর ছেলে ফরহাদ হোসেন। টিপু মণ্ডল ফল ব্যবসায়ী। পারভীন বেগম অন্যের বাসা বাড়িতে কাজ করেন। শনিবার টিপু মণ্ডল ফলের দোকানে ছিলেন। ফরহাদ আরজি নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে এবং সুরাইয়া তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশুনা করতো। ছেলে ও মেয়ে পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার সংবাদ পেয়ে বাড়ি আসেন টিপু মণ্ডল।
বিজ্ঞাপন
ঘটনার পর থেকেই পারভীন বেগম অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নেওয়া হয়। জ্ঞান ফিরলে ছেলে ও মেয়ের শোকে কান্না করেন। ঘুমের ঔষধ দেওয়ায় তিনি ঘুমাচ্ছেন। আর বাবা টিপু মণ্ডল বার বার ছেলে ও মেয়ের শোকে বিলাপ করছেন। রাত থেকে বাড়িতে চুলা জ্বলেনি।
টিপু মণ্ডলের বড় মেয়ে স্বর্না বলেন, তারা পাঁচ ভাইবোন। চার বোনের পর ভাই সবার ছোট। ঘটনার পর থেকে বাবা-মা কেউ কথা বলতে পারছে না। মাকে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুমিয়ে রাখা হয়েছে।
নিহত আরেক শিশু আশা আরজি নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। তারা দুই ভাইবোন। আশা বড়। বাবা আনোয়ার হোসেন ব্যাটারিচালিত অটোচালক। ঘটনার পর থেকে আশার মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহত খাদিজা দুই ভাই-বোন। খাদিজা বড়। তার বাবা আব্দুস সালাম ওয়েল্ডিং মিস্ত্রী। তার মা অজ্ঞান হয়ে বাড়িতে। স্বজনরা তার মাথায় পানি ঢালছে আর সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
নিহত সুরাইয়া ও ফরহাদ হোসেনে বড় আব্বু মুকুল মণ্ডল বলেন, আমার ছোট ভাই টিপু মণ্ডল কষ্ট করে সংসার চালায়। ঘটনার পর থেকে ভাই পাগলের মতো প্রলাপ করছে। যদি সরকার থেকে কোন সহযোগিতা করা হতো তাহলে উপকার হতো।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে নিহত প্রতি পরিবারকে আজ (রোববার) ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতার জন্য ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেলোয়ার হোসেন/আরআই