আত্মসমর্পণ করেছি অনেক দিন হয়ে গেল। কথা ছিল মামলা থেকে মুক্তি মিলবে। আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো হবে আমাদের জীবনযাপন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও মামলা থেকে মুক্তি মেলেনি। আদালতে হাজিরা এবং উকিল-মুহুরির টাকা দিতে দিতে আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি।

সোমবার (১ নভেম্বর) বাগেরহাটের রামপালে দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে একাধিক সাবেক বনদস্যুর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য উঠে আসে।

এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন।

রামপাল উপজেলা কমপ্লেক্স মাঠে অনুভূতি প্রকাশকালে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হান্নান বাহিনীর সদস্য জালাল মুন্সি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছিলাম। এখন অনেক ভালো আছি। তবে মামলার কারণে আদালতে হাজিরা ও উকিল-মুহুরিকে টাকা দিতে দিতে অর্থ শেষ হয়ে যাচ্ছে।

মাস্টার বাহিনীর সাবেক সেকেন্ড ইন কমান্ড সোহাগ আকন বলেন, সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়ালেও এখন আমাদের বাঁচতে হয় অর্থকষ্টে। সরকার ও র‍্যাব আমাদের অনেক কিছু দিলেও মামলা থেকে এখনো মুক্তি মেলেনি আমাদের। তিন বছর ধরে আদালতের বারান্দায় দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা ক্লান্ত। আমরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দুমুঠো ভাত খেয়ে বাঁচতে চাই। শুধু সহযোগিতা নয়, মামলা প্রত্যাহার করে আমাদের স্বাভাবিক জীবন আরও গতিশীল করে দিন।

আব্দুল বারেক তালুকদার বলেন, সরকার আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। এখন অন্তত পরিবারের কাছে থাকতে পারছি। আবার নগদ অর্থও দিয়েছে সরকার আমাদের। কিন্তু সেই অর্থ আমাদের উকিল-মোক্তারের পেছনে ব্যয় হয়েছে। ঘর, জাল ও দোকান প্রদানের ফলে আমরা অনেক খুশি। তবে এর সঙ্গে সরকারের কাছে আমাদের মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানাই।

অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে উপহারের ঘর পেয়েছেন ১০২ জন, ৯০ জন পেয়েছেন মুদি দোকান (মালামালসহ), ১২ জন পেয়েছেন জাল ও মাছ ধরার নৌকা, ৮ জন পেয়েছেন ইঞ্জিনচালিত নৌকা এবং ১১৪ জন পেয়েছেন গবাদিপশু।

এদিকে দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. হাবিবুর রহমান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পীর ফজলুর রহমান।

এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমদ, র‍্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।

তানজীম আহমেদ/এনএ