ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেঘনার তীরবর্তী মদনপুর ইউনিয়নে ২ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি ব্রিজ ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ধসে যাওয়ার পর ব্রিজের ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে স্থানীয়রা। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) মদনপুর ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।

জানা যায়, নির্মাণের তিন মাস না পার হতেই ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের চরপদ্মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন খাল ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের বড় খালের ওপর ব্রিজ দুটি দুমড়েমুচড়ে যায়।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্তের দেড় বছর পার হলেও ব্রিজ দুটি সংস্কারের কোনও উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছে এলাকার দুই হাজার মানুষ। দুর্ভোগ লাঘবে ব্রিজ দুটি দ্রুত সংস্কারের দাবি করছেন স্থানীয়রা। 

কথা হয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল খালেক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের সকলের দাবির কারণে খালের ওপর হাক্কা (সাঁকো) থেকে ব্রিজ করছে সরকার। কিন্তু কইরা কী লাভ হইছে? পানির চাপে ব্রিজ ভাইঙ্গা গেছে। এহন ব্রিজের ওপর হাক্কা (সাঁকো) দিয়া চলাফেরা করতে হয়। এই হাক্কা (সাঁকো) দিয়া চলাফেরার সময় প্রতিনিয়তো অনেক পোলাপান পইড়া হাত, পা ভাইঙ্গা যায়, মাথা ফাইটা যায়।’

স্থানীয় ফুলবানু বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা ব্রিজ চাইছি হেরা দিছেও। তয় কন্ডাক্টর চুরির লইগা আমাগো এই কষ্ট। এই হাক্কা দিয়া ভালো মানুষই যাইতে পারে না। আমাগো গ্রামের কেউর অসুখ হইলে হেরে লইয়া হাসপাতাল যাইতে বেমালা (প্রচুর) কষ্ট হয়।’

২ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদ মাল বলেন, ‘গেছে বার বইন্নায় রাস্তাঘাটের লগে বড় খালের ওপর এই ব্রিজটাও ভাইঙ্গা গেছে। এলাকার মাইন্সে সুপারিগাছ ও বাঁশ দিয়া হাক্কা (সাঁকো) বানাইছে হেইডাও গাঙ্গের হোতে (স্রোতে) লইয়া গেছে। আমরা অনেক কষ্টে আছি।’ 

স্থানীয়য় ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন নান্নু জানান, আম্পানে আমার ইউনিয়নের দুটি ব্রিজ দুমড়েমুচড়ে যায়। ২ নং ওয়ার্ডের বড় খালের ওপর ব্রিজটি দৌলতখান উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে করা হয়।

অপরটি ৬ নং ওয়ার্ডের চরপদ্মা প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন খালের ওপর ব্রিজটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অর্থায়নে করা হয়েছে। ব্রিজ দুটি সংস্কার করার জন্য আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে উপজেলা প্রশাসনের বরাবর আবেদন করেছি বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে দৌলতখান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম খানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

দৌলতখান উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) এইচ এম আনসার আলী জানান, ২০২১-১৯ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অর্থায়নে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে মদনপুর ইউনিয়নের চরপদ্মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন খালের ওপর ওই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজটি আম্পানের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্রিজটি সংস্কারের জন্য গত সপ্তাহে ইউএনও স্যারকে জানানো হয়েছে।

ইমতিয়াজুর রহমান/এমএসআর