জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাস-ট্রাকের পর লঞ্চ চলাচল বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার যাত্রী। পরিবহন ধর্মঘটের প্রথম দিনে লঞ্চ চলাচল করায় শনিবার (৬ নভেম্বর) বিকেল থেকে নদীবন্দরে ঢাকাগামী যাত্রীরা ভিড় করে। কিন্তু দুপুরের পর লঞ্চ চলাচল বন্ধের ঘোষণা আসায় হতাশ হয়ে পড়ে যাত্রীরা। এতে ঘাটে চলে আসার পর আবার ফিরে যেতে হয়েছে।

ক্ষুব্ধ যাত্রীরা জানান, নিম্ন-মধ্যবিত্তের দেশে মানুষকে জিম্মি করে ভাড়া বৃদ্ধি অনৈতিক এবং সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বাস, ট্রাক ও লঞ্চমালিকরা আন্দোলন করে হয়তো ভাড়া বাড়াতে পারবেন, এতে এখনকারের মতো বিপদেই থাকবেন সাধারণ মানুষ।

সন্ধ্যায় বরিশাল নৌবন্দরে দেখা গেছে, ঢাকা-বরিশাল এবং বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ পন্টুন থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বরিশাল থেক ৬টি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ছাড়েনি। সর্বশেষ (রাত সাড়ে ৭টা) ঘাটে তিনটি লঞ্চ নোঙর করা থাকলেও বাকি তিনটি ইতোমধ্যে লঞ্চ কোম্পানির ডকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ঢাকাগামী যাত্রী হাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাড়া বৃদ্ধির জন্য যাত্রীদের জিম্মি করে লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া বিবেকহীন কাজ। এ সিদ্ধান্ত বিকেল ৩টায় না নিয়ে আরও আগে নিতে পারত। তাহলে আমাদের দুর্দশা হতো না। তিনি আরও বলেন, হঠাৎ সরকার তেলের দাম বাড়িয়ে বিবেকহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তেমনি লঞ্চমালিকরাও হঠাৎ অবরোধের ডাক দিয়ে বিবেকহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। আসলে সরকার ও লঞ্চমালিকরা জনগণের সঙ্গে তামাশা করছেন।

পারভীন আক্তার নামের স্বরূপকাঠি থেকে আসা আরেক যাত্রী বলেন, মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলারে অস্বাভাবিক ভাড়া দিয়ে বরিশাল এসে জানলাম লঞ্চ যাবে না। এটা মানুষের সঙ্গে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের প্রতারণা। তারা সরকারের সঙ্গে ভিন্নভাবেও দর-কষাকষি করতে পারত। অনেক লঞ্চে শুক্রবার থেকেই ভাড়া বাড়িয়েছে। আজ লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রেখে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে পারত। আসলে পাবলিকের কথা কেউ ভাবে না, সরকার তার কথা চিন্তা করে আর বাস, ট্রাক ও লঞ্চমালিকরা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যস্ত। মাঝখানে পিষে যাচ্ছি জনগণ।

এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের কাউন্টার ম্যানেজার নাসির উদ্দিন বলন, মালিকপক্ষ থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে বলেছে। আমরা বন্ধ রেখেছি। মালিকপক্ষ বললে আবার চালাব। তিনি আরও বলেন, সরকার ডিজেলের যে দাম বাড়িয়েছে, তাতে এখন লঞ্চ ভাড়া না বাড়ালে লোকসান দিতে দিতে কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যাবে।

নিজাম শিপিং লাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজাম উদ্দিন মৃধা বলেন, লিটার-প্রতি ১৫ টাকা মূল্য বৃদ্ধি করায় বরিশাল-ঢাকা রুটের প্রতি ট্রিপ ৬০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ বেড়েছে। এ অবস্থায় যাত্রী ভাড়া না বাড়ালে লঞ্চ চলাচল সম্ভব না। লঞ্চমালিকদের নেতারা বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। কিন্তু আপাতত সুফল আসেনি। ফলে লোকসান দিয়ে লঞ্চ চালানো আমাদের দ্বারা সম্ভব না।

লঞ্চমালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও বরিশাল চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় প্রতিটি লঞ্চে জ্বলানি বাবদ খরচ বেড়েছে। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আগের নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে এক দিন যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। কিন্তু এখন আর সম্ভব না।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ