‘কিছুই করার নেই। সকালে অফিস আছে। বেসরকারি চাকরি করি। চাকরি তো বাঁচাতে হবে। নওয়াপাড়া থেকে বাগেরহাট পৌঁছাতে প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন দুই বাচ্চা আর স্ত্রী নিয়ে ৭০০ টাকায় যাচ্ছি পিরোজপুর। যত সমস্যা আমাদের মত সাধারণ মানুষের। তেলের দাম বাড়ায় খরচও বাড়ল আমাদের। ভোগান্তিতেও পড়লাম আমরা।’ 

শনিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন যশোরের নওয়াপাড়া থেকে আসা বোরহান উদ্দীন।

বাবার অসুস্থতার কারণে গত বুধবার (২ নভেম্বর) সকালে একদিনের ছুটি নিয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে পিরোজপুর থেকে যশোরের নওয়াপাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। চাকরি করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) পিরোজপুর শাখায়। রোববার (৭ নভেম্বর) সকালে ডিউটি থাকায় বাধ্য হয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অটোতে করে পিরোজপুর যাচ্ছেন বোরহান উদ্দিন।   

পরিবহন ধর্মঘটে সারাদেশের মত বাগেরহাটেও চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। জরুরি কাজে বাধ্য হয়ে হেঁটে অথবা ভ্যান, রিকশা, অটো বা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে যাচ্ছেন কেউ কেউ। তবে এর জন্য দুই থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। এরপরও যানবাহন পাচ্ছেন না সবাই। 

শনিবার সকালে ৫০০ টাকা নিয়ে অসুস্থ বোনকে দেখতে শরণখোলা থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন আব্দুল ছত্তার ব্যাপারী। তিনি বলেন, বাগেরহাট পর্যন্ত পৌঁছাতে ২২০ টাকা শেষ। এখান থেকে অটোতে খুলনার ভাড়া চায় ২০০ টাকা। ২০০ টাকায় খুলনা গেলে আমি ফিরব কীভাবে। তাই হেঁটেই রওনা দিয়েছি, সামনে থেকে যদি একটু কম ভাড়ায় কিছুতে উঠতে পারি।

১৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে অটোরিকশায় খুলনা যাওয়া বারুইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাসিমা বেগম বলেন, সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারের সিরিয়াল দেওয়া রয়েছে। না গেলে আবার কবে সিরিয়াল পাব জানি না। তাই ৬০ টাকার ভাড়া ১৮০ টাকা দিয়ে যাচ্ছি।

শুধু বোরহান, নাসিমা বা আব্দুল ছাত্তার নয়, অনেকেই এমন জরুরি প্রয়োজনে দ্বিগুণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩-৪ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

অটোরিকশা চালক শাহাদাত ফকির বলেন, সাধারণত আমরা স্থানীয় সড়কে কম দূরত্বে ভাড়ায় গাড়ি চালাই। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে এই দুই দিন খুলনা-পিরোজপুর, মোংলাসহ দূরে দূরে যাচ্ছি। ভাড়াও নিজেদের মত করে নিচ্ছি। তবে চার্জের গাড়ি তো। ইচ্ছা করলেও অনেকক্ষণ চালানো যায় না।

তানজীম আহমেদ/আরএআর