পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র হতে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন চেয়েছেন সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর ছেলে ও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন। 

মঙ্গলবার (০৯ নভেম্বর) বেড়া পৌর এলাকায় উপজেলা জামায়াতের আমীর ডা. আব্দুল বাসেদের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে সব ধরনের  সহযোগিতা ও সমর্থন চেয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের সমর্থন চাওয়ায় জেলাজুড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। 

বেড়া উপজেলা জামায়াতের আমীর ডা. আব্দুল বাসেত জানান, মঙ্গলবার আসিফ শামস রঞ্জন আমার ব্যক্তিগত অফিসে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না, সে কারণে তিনি আমার কাছে ভোট চান। বেড়া পৌরসভায় জামায়াতের প্রায় ১২ হাজার ভোট রয়েছে। আমাদের দলীয় প্রার্থী না থাকায় রঞ্জন জামায়াতের ভোট তার পক্ষে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। কেবল রঞ্জনই নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলুর রহমান মাসুদও সমর্থন চেয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আসিফ শামস রঞ্জন বলেন, সকালে হাঁটতে বের হয়ে জনসংযোগের সময় জামায়াত আমীর ডা. আব্দুল বাসেতের সঙ্গে দেখা হয়েছে। প্রার্থী হিসেবে তাদের এলাকার মানুষের ভোট ও দোয়া চেয়েছি। জামায়াতের ভোট ব্যাঙ্কের সমর্থন চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

এদিকে জামায়াত আমিরের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। রফিকুল ইসলাম নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিন্দা জানিয়ে বলেন, বেড়ায় আওয়ামী লীগের কী এতটাই দৈন্যদশা যে জামায়াতের কাছে সমর্থন চাইতে হলো? মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী, সাবেক জামায়াত আমীর মতিউর রহমান নিজামীর স্বজন ও শিষ্যদের কাছে ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

হুমায়ুন আহমেদ নামে আরেক যুবক লিখেছেন, জামায়াতের কাছে ভোট প্রার্থনা করা মানে স্বাধীন বাংলাদেশকে লজ্জিত করা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মায় শাস্তি দেওয়া। বিষয়টি আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমীর নিজামীর জন্মস্থান বেড়া-সাথিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধের বিচার করে পাবনাবাসীকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত জনগণের কাছে ঘৃণিত একটি দল। নৌকার বিজয়ে জামায়াত-বিএনপির সমর্থন সহযোগিতা আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, দল হিসেবে আমরা জামায়াতকে ঘৃণা করি। সামাজিকভাবে মেলামেশা নিষিদ্ধ না হলেও, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জামায়াতের রাজনৈতিক সমর্থন চাওয়ার সুযোগ নেই। আসিফ শামস রঞ্জন কেন জামায়াত আমিরের কাছে গিয়েছিলেন তা আমার জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে, দল বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।

পাবনা জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, বেড়া পৌর মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আসিফ শামস রঞ্জন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন এমপি শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আব্দুল বাতেন এবং ভাতিজি এস এম সাদিয়া আলম। এমনকি মেয়র পদে আরও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ এইচ এম ফজলুর রহমান মাসুদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ডা. আব্দুল আওয়াল ও কেএম আব্দুল্লাহ। 

প্রসঙ্গত, আগামী ২৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে পাবনার বেড়া পৌরসভার নির্বাচন। 

রাকিব হাসনাত/এসপি