জোড়াতালি দিয়ে চলছে বালিয়াকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম চলছে জোড়াতালি দিয়ে। উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৩ লাখ জনবসতির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০১১ সালের ২৫ মার্চ ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় হাসপাতালটি।
এরপরও উপজেলার মানুষ সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি ওষুধসংকট ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করায় রোগীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সব কিছুই স্বাভাবিক রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ৩ লাখ মানুষের বসবাস। এই ৩ লাখ মানুষের জন্য বালিয়াকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৮ জন চিকিৎসকের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৫ জন চিকিৎসক। এছাড়াও ২৩টি কর্মচারী পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৬ জন।
আবার ওই ৫ জন চিকিৎসককেও একই সাথে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
বিজ্ঞাপন
তারপর এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন, ইসিজি মেশিন, ডেন্টাল চিকিৎসার সরঞ্জামের অভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, স্টোরকিপার, ওয়ার্ডবয়সহ লোকবল সংকটে হাসপাতালের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
জানা গেছে, একটি এনালগ এক্সরে মেশিন থাকলেও সেটিকে ব্যবহারের উপযোগী করা যায়নি জনবলের অভাবে। অপারেশন থিয়েটারটি স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকলেও তা জনবলের অভাবে ভুগছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে স্বাস্থ্যসেবা বিপর্যয়ে পড়েছে।
গুরুতর কোনো রোগীর সেবা তো দূরের কথা প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অনেক রোগীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যুৎ চলে গেলে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা রোগীদের পরতে হয় আরেক বিড়ম্বনায়। ২০০৮ সালের ৬ জুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ কেভির একটি জেনারেটর প্রদান করা হলেও তা আজ পর্যন্ত চালু করা হয়নি।
সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, ডাক্তার দেখাতে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। এতো রোগী দেখতে ডাক্তাররাও হিমশিম খাচ্ছেন। পাশাপাশি করোনার টিকা চালু থাকায় অনেকে টিকা নেওয়ার আগে বা পরে ডাক্তার দেখাতে লাইনে দাঁড়ানোই চাপ পড়েছে বেশি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা ঢাকা পোস্টকে জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো চিকিৎসাসেবা সম্পূর্ণ পাওয়া যায় না। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে ফরিদপুর রাজবাড়ী রেফার করে। এখানকার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট থাকায় পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
চিকিৎসাসেবা নিতে আসা এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন না থাকায় আমাদের বিভিন্ন ক্লিনিকে পরীক্ষা করাতে হয় বেশি টাকায়। সেখানে তারা তাদের ইচ্ছামতো টাকা নেয়।
তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতাল থাকতে যদি বাইরে থেকেই পরীক্ষা করাব, তাহলে এই হাসপাতাল থেকে আমাদের লাভ কী? আমাদের মতো মানুষ যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পায় এজন্য সরকারের কাছে দাবি আমাদের হাসপাতালের দিকে নজর দিন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাসির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। জরুরি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ ও এক্সরে মেশিন সচল করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিম বলেন, বালিয়াকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারসহ বিভিন্ন পদে জনবল সংকটের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত চিকিৎসক-সংকট কেটে যাবে।
মীর সামসুজ্জামান/এমএসআর