যশোরে ২২ ইউপিতে ভোট কাল
‘বিদ্রোহী’দের বহিষ্কার করেও লাগাম টানতে পারেনি আ.লীগ
রাত পোহালেই যশোরের ঝিকরগাছা-চৌগাছার ২২টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ শুরু হবে। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন চলবে ভোট। স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনে ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী বুধবার মধ্যরাত থেকে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণাও শেষ হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত দলীয়ভাবে নির্বাচন না করায় অধিকাংশ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মূলপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ‘বিদ্রোহী’ (স্বতন্ত্র) প্রার্থী। ভোটের সমীকরণে নৌকার প্রার্থীদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে দলের ‘বিদ্রোহী’রা।
বিজ্ঞাপন
ফলে ভোটের মাঠে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হওয়ায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলার ২২ ইউনিয়নের মধ্যে ২০টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ হবে। বাকি দুটি চৌগাছার ফুলসারা ও চৌগাছা সদর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে নৌকা প্রতীক দিলেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ২০টি ইউনিয়নের ১৩টিতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
ইতোমধ্যে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করেও লাগাম টানতে পারেনি আওয়ামী লীগ। কারণ দলের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছেন। আর একই দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় উৎসবের নির্বাচন রূপ নিতে পারে সংঘর্ষের দিকে।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তর ও আধিপত্য বজায় রাখার জন্য দলীয় প্রার্থীর নেতাকর্মীদের সাথে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলা-পাল্টাহামলা, নির্বাচনী কার্যালয়সহ প্রচার মাইক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রেই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় অন্য নির্বাচনের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে, ২২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২০টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ হবে। এরমধ্যে ১৩টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ২২ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী। ইতোমধ্যে ঝিকরগাছার ৬ ইউনিয়নের ৯ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে চৌগাছার ৭টি ইউনিয়নে নৌকার ১৩ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
৪ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর প্রেরিত ঝিকরগাছা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল ও সাধারণ সম্পাদক মুসা মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ৬ ইউনিয়নের ৯ বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এরপর জেলা কমিটি তাদের সাময়িক বহিষ্কার করে কেন্দ্রে চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য পাঠিয়েছে।
বহিষ্কাররা হলেন- গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নে আতাউর রহমান ঝন্টু, বদর উদ্দীন বিল্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ ও মইজ উদ্দিন, মাগুরা ইউনিয়নে ওবাইদুর রহমান, শিমুলিয়া ইউনিয়নে জহুরুল হক, গদখালি ইউনিয়নে শাহজাহান আলী, নির্বাসখোলা ইউনিয়নে নজরুল ইসলাম, হাজিরবাগ ইউনিয়নে নুরুল আমীন মধু।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তারা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন। তাদের দল থেকে সাময়িক অথব চূড়ান্ত বহিষ্কারের সুপারিশ করা হল। ২ নভেম্বর যশোরের চৌগাছায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় ১৩ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তারা হলেন পাশাপোল ইউনিয়নে আবদুল মতলেব হোসেন, শাহিনুর রহমান শাহীন, সিংহঝুলি ইউনিয়নে ইব্রাহিম খলিল বাদল ও হামিদ মল্লিক, ধুলিয়ানি ইউনিয়নে এসএম মমিনুর রহমান ও আলাউদ্দিন, জগদীশপুর ইউনিয়নে সিরাজুল ইসলাম মাস্টার ও আজাদুর রহমান খান, স্বরুপদহ ইউনিয়নে শেখ আনোয়ার হোসেন, নুরুল কদর, নারায়নপুর ইউনিয়ন আবু হেনা মোস্তফা কামাল বিদ্যুৎ ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নে নুরুল ইসলাম মাস্টার।
দল থেকে বহিষ্কার করে তাদের লাগাম টানতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ভোটের মাঠে ‘বিদ্রোহী’রা সরব রয়েছেন। আধিপত্যের লড়াইয়ে কয়েকটি ইউনিয়নে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। যশোর আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন জানান, ঝিকরগাছা ও চৌগাছার ২২ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঝিকরগাছা-চৌগাছার ২২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬৩ জন। এর মধ্যে ঝিকরগাছাতে ২ লাখ ১৯ হাজার ২৭৬ জন ভোটার। আর চৌগাছায় ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৮৭ জন ভোটার। দুই উপজেলায় সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করতে ৩ হাজার ৪৮০ জন নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়েজিত থাকবে।
সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার হুমায়ুন কবীর বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে সব ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ হবে।
জাহিদ হাসান/এমএসআর