ষষ্ঠী পুজার মধ্য দিয়ে মাগুরায় শত বছরের ঐতিহ্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাত্যায়নী পূজা বুধবার (১০ নভেম্বর) শুরু হয়েছে। সন্ধ্যায় বেলতলায় ঘট বসিয়ে ফুল, বেলপাতা, ঢাক, শঙ্খ, উলু ধ্বনি দিয়ে দেবীকে আমন্ত্রণ করা হয়। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী পূজার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে ঐতিব্যবাহী কাত্যায়নী পূজা।

দেশের হিন্দুদের কাছে দুর্গাপূজা সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলেও মাগুরায় হিন্দুদের কাছে তা ব্যতিক্রম। দুর্গাপূজার এক মাস পর কাত্যায়নী পূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে। দেশের মধ্যে মাগুরাতেই সব থেকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবার পরিস্থিতি খানিকটা ভিন্ন। নেই চিরচেনা সেই জমকালো আলোকসজ্জা এবং দৃষ্টিনন্দন গেট ও পূজার প্যান্ডেল।

এবারের দুর্গাপূজায় কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় মাগুরাতে কাত্যায়নী পূজা না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে পূজা করার অনুরোধ জানানো হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই পূজা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এরপর সীমিত আকারে মাগুরায় কাত্যায়নী পূজা আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

সীমিত পরিসরে হলেও এই কাত্যায়নী পূজাকে কেন্দ করে মাগুরা শহর যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বুধবার সকালে শহরের নিজনান্দুয়ালী নিতাই গৌর সেবাশ্রম, ছানাবাবুর বটতলা, জামরুল তলা, নতুন বাজার স্মৃতিসংঘ, সাতদোহা ন্যাংটা বাবার আশ্রম, তাঁতিপাড়া সার্বজনীন পূজামণ্ডপসহ সবকটি পূজামণ্ডপে সরেজমিনে গিয়ে পূজার প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। তবে অন্যান্য বারের মত জমকালো আলোকসজ্জা এবং দৃষ্টিনন্দন সেই গেট ও প্যান্ডেল স্থাপন করা হয়নি।

মাগুরা নতুন বাজার স্মৃতি সংঘের পূজা কমিটির সভাপতি প্রণয় ঘোষ বলেন, কাত্যায়নী পূজা মাগুরার একটি ঐতিব্যবাহী পূজা। এই পূজাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে শহরের সবগুলো বাসা বাড়িতে আত্মীয়- স্বজন আসতে শুরু করেছে। এখানে দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে। মূলত কাত্যায়নী পূজায় রাতের বেলায় বেশি মানুষের সমাগম হয়ে থাকে।

মাগুরা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব কুন্ডু বলেন, মাগুরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পীঠস্থান। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কাত্যায়নী পূজা উৎসবে অংশগ্রহণ করে। এ বছর সীমিত আকারে হলেও তা মাগুরাবাসীর জন্য উৎসবের হবে বলে আমি মনে করি। এ বছর পৌর এলাকায় চৌদ্দটি এবং জেলার অন্যান্য উপজেলায় ৪৪টিসহ মোট ৫৮টি পূজামণ্ডপে কাত্যায়নী পূজা হচ্ছে।

মাগুরার পুলিশ সুপার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পূজামণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আশা করছি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই কাত্যায়নী পূজা সম্পন্ন হবে।

আরএআর