৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন

ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এই উপজেলার শোয়া লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা নেওয়ার একমাত্র ভরসা। ৩১ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে তৈরি হচ্ছে নতুন ভবন। ২০১৭ সালে কাজ শুরু হলেও চার বছরেও শেষ হয়নি ভবন নির্মাণের কাজ। প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও হয়নি একটি জটিল অস্ত্রোপচার কিংবা প্রসূতিদের সিজারিয়ান অপারেশন। টেকনিশিয়ানের অভাবে অচল হয়ে পড়ে আছে দুটি এক্স-রে যন্ত্র। নেই কোনো ডেন্টাল ল্যাব ও প্যাথলজি ল্যাব টেকনিশিয়ান।

২০০২ সালে ফুলগাজী উপজেলার পুরোনো মুন্সিরহাট বাজারে ৩১ শয্যার  এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালু হয়। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ রোগী এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। গড়ে প্রতিদিন ২৫ জন রোগী ভর্তি থাকেন। তবে হাসপাতালে বেড-সংকটের কারণে রোগীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ।

এদিকে রোগীর সংখ্যা বাড়লে হাসপাতালের বারান্দায় আশ্রয় নিতে হয় রোগীদের। বেড-সংকট নিরসনের জন্য ২০১৭ সালে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী একবছরের মধ্য ২০১৮ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ৫০ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান ঢালি কনস্ট্রাকশন।

হাসপাতালের এক্স-রে টেকনিশিয়ান কয়েক বছর ধরে শূন্য পড়ে আছে। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সচল এক্স-রে যন্ত্র দুটি বর্তমানে অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। দন্ত বিভাগের টেকনিশিয়ানের ১৫ বছর ধরে শূন্য। প্যাথলজি ল্যাব টেকনিশিয়ান পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। রোগীদের অতিপ্রয়োজনীয় এক্স-রে ও সাধারণ পরীক্ষাগুলো করার জন্য জেলা শহরে আসতে হয়। এতে রোগীদের যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়, তেমনি বেশি দামে খরচ করতে হচ্ছে।

৫০ শয্যাবিশিষ্ট নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে, টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া হলে ফুলগাজীতে স্বাস্থ্যসেবার মান আরও বাড়বে। ভবন নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করা ও টেকনিশিয়ান নিয়োগের জন্য জেলা সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সমাধান মেলেনি।

এ বি এম মোজাম্মেল হক, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরও জানা যায়, গত ১৭ বছরেও হাসপাতালে অবেদনবিদ (অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ) এবং জরুরি চিকিৎসা কর্মকর্তার (ইএমও) পদ সৃষ্টি করা হয়নি। অবেদনবিদ ও জরুরি চিকিৎসা কর্মকর্তা না থাকায় হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থাকলেও তা অযত্নে পড়ে রয়েছে। ফলে সেটা জরুরি কিংবা প্রসূতি রোগীদের কোনো কাজে আসছে না। বর্তমানে হাসপাতেল সৃষ্ট ১৬ পদের মধ্য ১৫ জন চিকিসৎক কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন ধরে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) পদটি শূন্য পড়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও চিকিৎসা নিতে আসা হারুন অর রশিদ ঢাকা পোস্টকে জানান, এ হাসপাতালে একসময় চিকিৎসক ছিলেন পাঁচজন। এখন চিকিৎসক বেশি থাকলেও সবাইকে নিয়মিত পাওয়া যায় না। এক্স-রে, প্যাথলজিসহ অন্যান্য পরীক্ষাগুলা হাসপাতালে করতে পারলে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হতো। তবে জরুরি সেবা ও প্রয়োজনীয় প্রাথমিক ঔষধপত্র পাওয়ায় কিছুটা সন্তুষ্ট রোগীরা।

নির্মাণকাজের অগ্রগতি বিষয়ে জানার জন্য ঢালি কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আবদুস সালাম ঢালির মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ বি এম মোজাম্মেল হক জানান, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে, টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া হলে ফুলগাজীতে স্বাস্থ্যসেবার মান আরও বাড়বে। ভবন নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করা ও টেকনিশিয়ান নিয়োগের জন্য জেলা সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সমাধান মেলেনি।

ফেনী জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বাপ্পি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঠিকাদারের গাফলতির কারণে ভবনের নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে আমরা আশা করছি ২০২১ সালের জুনের মধ্য কাজ শেষ হবে।

ফেনীর সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটের বিষয়টি দীর্ঘদিনের সম্যা। এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ভবনের কাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়েও স্বাস্থ্য প্রকৌশল নোয়াখালী আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। আশা করি দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে।

হোসাইন আরমান/এনএ