গাজীপুরের টঙ্গী সেতু বন্ধ করে দেওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এ মহাসড়ক হয়ে চলাচলকারী উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার যাত্রীরা। দীর্ঘ সময়ের যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে পায়ে হেঁটেই টঙ্গী এলাকা পার হচ্ছেন। যানবাহনগুলোকে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। 

গত মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) গভীর রাতে টঙ্গী সেতুর একটি স্ল্যাবের অংশবিশেষ ভেঙে পড়ে। ভাঙা অংশে লোহার পাটাতন দিয়ে সাময়িকভাবে যান চলাচল সচল রাখা হয়। পরদিন বিআরটি কর্তৃপক্ষ সেতুটি পরিদর্শন করে। তারা বুধবার রাত ১২টা থেকে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। এরপর থেকে শুরু হয় যানজট। যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে ঢাকা-টঙ্গী-কালিগঞ্জ-ঘোড়াশালসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আশপাশের আঞ্চলিক সড়কগুলো। সেই যানজট এখনো চলছে। 

শুক্রবার ভোর থেকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বাড়তে থাকে, আর বাড়তে থাকে যানজটও। ফলে জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে দিনভর যান চলাচলে ধীরগতি দেখা যায়।

যানজটের কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার উত্তরায় যাননি শামসুজ্জামান মামুন নামে গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী। শুক্রবার খুব ভোরে রওনা হয়েও রেহাই পাননি তিনি, যানজটেই পড়তে হয়েছে। গাজীপুর থেকে উত্তরায় যেতে তার লেগেছে ৫ ঘণ্টার বেশি সময়। অন্য সময় এই পথে সময় লাগত সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা। 

ঢাকার ব্যবসায়ী সোহাগ ব্যবসায়িক কাজে সকাল ৮টায় পুরান ঢাকা থেকে গাজীপুরের সালনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তিনি জানান, ঢাকার ভেতরের মোড়ে মোড়ে যানজট এড়িয়ে আব্দুল্লাহপুর আসতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা। আব্দুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া হয়ে বাসটি চলতে থাকলেও প্রায় ৩ ঘণ্টা লেগেছে কেবল টঙ্গী এলাকা অতিক্রম করতে।

যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষুব্ধ এক যাত্রী বলেন, শুক্রবার ভোরে চিকিৎসার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে রওনা হয়েছি ঢাকার উদ্দেশ্যে। বেলা সাড়ে ১১টায় চিকিৎসকের সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত থাকলেও পথেই পুরো সময় নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি পথ গিয়ে কখন ডাক্তার দেখাব আর কখন আবার ফিরব- এই দুশ্চিন্তায় আছি।

এই পথে চলাচলকারী প্রভাতী-বনশ্রী বাসের চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সংস্কার কাজের ধীরগতির জন্যই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পুরো সড়কটি এখন যন্ত্রণার মনে হচ্ছে।

ময়মনসিংহগামী আরেক বাসের চালক হামিদুল ইসলাম বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চাইতে ঢাকায় ঢুকতে ও বের হতে কয়েকগুণ বেশি সময় লাগছে। আমরা ট্রিপ অনুযায়ী টাকা পাই। সময় বেশি লাগলেও টাকা বেশি পাচ্ছি না।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন বলেন, কয়েকটি জেলার পরিবহন যাত্রী ও মালামাল নিয়ে টঙ্গীর বন্ধ হয়ে যাওয়া সেতু হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করত। বৃহস্পতিবার আমরা ঢাকার গাড়িগুলো সরাসরি টঙ্গী বাজার এলাকার বেইলি সেতু দিয়ে গাজীপুরে প্রবেশ করিয়েছিলাম। আর গাজীপুরের গাড়িগুলো টঙ্গী মিল গেট হয়ে কামারপাড়া সড়ক দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে বলেছি। 

তিনি বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে উত্তরবঙ্গের গাড়িগুলো সরাসরি টঙ্গী বাজার বেইলি সেতু দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে দিচ্ছি। আর ঢাকার গাড়িগুলো কামারপাড়া সড়ক দিয়ে গাজীপুরে প্রবেশ করছে। এতে কিছুটা সুফল পাচ্ছি আমরা।

যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশের সদস্যরাও সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

শিহাব খান/আরএআর/জেএস