বিশ্বে এখন প্রায় ১০ লাখ নারী ফিস্টুলা রোগে ভুগছেন। তার মধ্যে বাংলাদেশে ভুগছেন প্রায় ২০ হাজার নারী। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার নতুন রোগী যোগ হচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর যোগ হন প্রায় দুই হাজার নতুন রোগী। এ পরিস্থিতিতে সামাজিক সচেনতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে বাল্যবিবাহ রোধ ও কম বয়সে গর্ভধারণ না করার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

রোববার (২১ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর আরডিআরএস ভবনের বেগম রোকেয়া মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ফিস্টুলা রোগী শনাক্তকরণ’ শীর্ষক অ্যাডভোকেসি সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএইপএ) বাংলাদেশ ও ল্যাম্ব হাসপাতালের এফআরআরইআই প্রকল্পের কারিগরি সহায়তায় এ সভার আয়োজন করে রংপুর বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) কার্যালয়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রংপুর বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক (উপসচিব) মো. আব্দুল মোতালেব সরকার বলেন, ফিস্টুলা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে। বিলম্বিত প্রসব বা বাধাগ্রস্ত প্রসব, বাল্যবিবাহ ও কম বয়সে গর্ভধারণ, জরায়ুতে অস্ত্রোপচার, অদক্ষ ধাত্রী বা প্রতিবেশীর মাধ্যমে ডেলিভারি করানোসহ সচেতনতার অভাবে ফিস্টুলা রোগ বাড়ছে।

তবে হতাশ না হওয়ার আশা দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ফিস্টুলা রোগীর চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে। সমাজসেবা থেকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়। প্রয়োজনে ফিস্টুলা রোগীয় চিকিৎসায় সমাজসেবা আরও বড় পরিসরে ল্যাম্ব হাসপাতালের পাশে থাকবে।

বক্তারা বলেন, নারী জননাঙ্গের ফিস্টুলা প্রতিরোধযোগ্য। প্রাথমিকভাবে ফিস্টুলা শনাক্ত হলে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিতে হবে। রংপুর বিভাগে এ রোগ নিরাময়ে ল্যাম্ব হাসপাতাল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ফিস্টুলা রোগীর চিকিৎসাসেবা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রয়েছে ল্যাম্ব হাসপাতালে। তবে এ রোগ প্রতিরোধে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও কম বয়সে গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকতে হবে। বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত প্রসব প্রতিরোধ, দক্ষ স্বাস্থ্যসেবাদানকারীর কাছ থেকে গর্ভকালীন, প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে গুরুত্ব বাড়াতে হবে।

গর্ভকালীন ন্যূনতম চারবার স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ, মিডওয়াইফের কাছ থেকে মাতৃস্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ এবং যেকোনো জটিলতায় তৎক্ষণাৎ নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের প্রসব যাতে সহজ ও নিরাপদে হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা উন্নয়ন জরুরি। কীভাবে নিরাপদ প্রসব সম্ভব, এর জন্য যেমন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি গর্ভবতী মায়েদের পরিবারের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিরও প্রয়োজন রয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রংপুর পরিবার পরিকল্পনা উপপরিচালক ডা. শেখ মো. সাইদুল ইসলাম, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন। সভাপতিত্ব করেন রংপুর বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম লেলিন।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এফআরআরইআই প্রজেক্ট (ল্যাম্ব) ম্যানেজার মাহাতাব উদ্দিন লিটন। ফিস্টুলা রোগ-সম্পর্কিত ধারণাপত্র তুলে ধরেন ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার ডা. তাহারিমা হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন রংপুর যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুর রউফ শাহ্, মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সেলোয়ারা বেগম, নীলফামারী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুসরাত ফাতেমা, রংপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আব্দুল মতিন প্রমুখ।

অ্যাডভোকেসি সভায় স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক, ধাত্রী, শিক্ষক, সংগঠক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ৩০ জন অংশ নেন। ফিস্টুলা রোগ কী, আক্রান্তের কারণ, বর্তমান পরিস্থিতি, শনাক্তের উপায়, চিকিৎসাসেবা ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

প্রসঙ্গত, নারী জননাঙ্গের ফিস্টুলার লক্ষণ— সহজ উপায় হচ্ছে রোগীর সব সময় প্রস্রাব বা পায়খানা অথবা উভয়ই ঝরতে থাকবে। সে ক্ষেত্রে প্রস্রাব বা পায়খানার সময় রোগীর কোনো চাপ বা বেগ অনুভব হবে না। সব সময় কাপড় ভেজা থাকবে। এ সমস্যা শুরু হবে সন্তান প্রসবের পর কিংবা তলপেট বা জরায়ুতে কোনো অপারেশনের পর। অর্থাৎ ফিস্টুলা হচ্ছে মাসিকের রাস্তার সঙ্গে মূত্রথলি অথবা মলাশয়ের এ বা একাধিক অস্বাভাবিক ছিদ্র হয়ে যুক্ত হওয়া। ফলে মাসিকের রাস্তা দিয়ে সব সময় প্রস্রাব বা পায়খানা অথবা উভয়ই ঝরতে থাকে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ