রাসেল শেখ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় রাসেল শেখ (১৯) নামের এক তরুণকে হাত-পা বেঁধে তালাবদ্ধ ঘরে এক সপ্তাহ ধরে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য উসমান গাজীর বিরুদ্ধে। ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা চুরির অভিযোগে তাকে আটকে রাখা হয়ছে বলে জানা গেছে।

পরে স্থানীয় বাসিন্দারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে গতকাল শুক্রবার রাতে ওই তরুণকে তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ।

রাসেল শেখ দক্ষিণ দৌলতদিয়া সৈদালপাড়ার নজরুল শেখের ছেলে। তাকে উদ্ধারের সময় পুলিশ উসমানের ছোট ভাই মুকবুল কাজীকে (২৮) আটক করেছে।

শনিবার (২৭ নভেম্বর) এ ঘটনায় রাসেলের খালা শুকুরজান বাদী হয়ে ইউপি সদস্যসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। অভিযুক্ত ইউপি সদস্য উসমান কাজী পলাতক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাসেল ঢাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। রাসেলের বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী। তার মা সৌদিপ্রবাসী। তিন মাস আগে রাসেলের বাড়ির পাশে সোনামুদ্দিনের নামের একজনের অটোরিকশা চুরি হয়। এ ঘটনায় সোনামুদ্দিন তাকে সন্দেহ করেন। রাসেল এলাকায় থাকায় স্থানীয়রা তাকে আটক করে মারধরের পর জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করেন। ২০ দিন আগে সোনামুদ্দিনের আরেকটি অটোরিকশা চুরি হয়। তখনও তিনি রাসেলকে সন্দেহ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জানান, এ ঘটনায় গত ২০ নভেম্বর দুপুরে দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সালিস বসানো হয়। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ওয়ার্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রাসেল ভয়ে চুরির সঙ্গে তার মামা মঞ্জু ফকিরসহ খালাতো ভাইদের জড়িত থাকার কথা বলেন।

তিনি আরও জানান, পরে ২৭ নভেম্বর পুনরায় সালিসের দিন নির্ধারণ করা হয়। এর আগ পর্যন্ত রাসেলকে ইউপি সদস্য উসমান কাজীর জিম্মায় রাখার সিদ্ধান্ত দেন চেয়ারম্যান। পরে উসমান কাজী তার একটি ঘরে রাসেলকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। উসমানের দুই ভাই মুকবুল, আসাদ কাজীসহ অন্যরা তাকে পাহারা দিতেন।

এ বিষয়ে রাসেল শেখ বলেন, আমি কোনো চুরির সঙ্গে জড়িত না। অটো চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। কারোর সঙ্গে কোনো দিন মারামারি করিনি। কারও একটি টাকাও মেরে খাইনি। এরপরও আমাকে অমানবিক নির্যাতন করেছে। সাত দিন একটা আন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। খাবার চাইলে আমাকে হাত-পা বেঁধে পেটাত। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় বিষয়টি ৯৯৯-এ ফোন করে জানালে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান জানান, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি সালিস বসেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রাসেলকে কোথায় রাখা হয়েছিল, তা আমার জানা নেই। আমি কাউকে আটকে রাখার নির্দেশও দিইনি।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল তায়াবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৯৯৯-এ খবর পেয়ে গতকাল রাতে ইউপি সদস্য উসমান কাজীর বাড়িতে তালাবদ্ধ ঘর থেকে রাসেলকে উদ্ধার করি। এ সময় উসমান কাজীর ভাই মুকবুল কাজীকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।

মীর সামসুজ্জামান/এনএ