অধীনস্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মারপিটের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। সোমবার (২৯ নভেম্বর) তিনি ‘বিডব্লিউডিবি ফ্যামিলি’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে তিন মিনিটের একটি ভিডিও এবং ফটো পোস্ট করে উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রনিকে মারধর করার জন্য ক্ষমা চান। এ সময় তার পাশে মো. রনিও ছিলেন।

ফেসবুকে আপলোড করা ভিডিওতে আবদুল আহাদ বলেছেন, ‘আমরা মানুষ, যা ঘটেছে, তার জন্য আমরা বিনয়ের সঙ্গে ক্ষমা চাচ্ছি। ‘উই আর ইউনাইটেড অ্যাগেইন।’ আবদুল আহাদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রুপে ভিডিও এবং ফটো পোস্ট করলেও নিজের টাইমলাইনে কোনো পোস্ট দেননি।

ঘটনাটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে ভিডিওতে আবদুল আহাদ বলেন, ‘আমাদের কাজের প্রেশারের কারণে বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা আমাদের টেম্পার ধরে রাখতে পারিনি। আমরা একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করি। কিন্তু ১০ সেকেন্ডে আমাদের যেমন দেখা গেছে, আমরা কিন্তু ওই রকম মানুষ না। এই সমস্ত জিনিসপত্র মনে রাখার মতো আমাদের হাতে সময় নেই। আমাদের হাতে অনেক কাজ। যেটা ঘটে গেছে, সেটার জন্য আমরা অনুতপ্ত, আমরা ক্ষমা প্রার্থী। আমরা এটাও অনুরোধ করি, এই জিনিসগুলো আসলে পেপারে, টেলিভিশনে যাওয়ার মতো বিষয় না, ফেসবুকে যাওয়ার মতো বিষয় না।’

ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, এই বিষয়গুলো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ছড়ানোর মতো বিষয় না। আমরা প্রত্যেকেই যেকোনো জায়গায় একটু সহনশীল আচরণ করা দরকার। এই জিনিসগুলো এইভাবে ভাইরাল করা আমাদের ঠিক হয়নি। আমি যদি একটা অন্যায় করে থাকি, বিচার করার জন্য আমার সুপারিনটেনডেন্ট প্রকৌশলী আছেন, প্রধান প্রকৌশলী আছেন, বোর্ড আছে। 

ভাইরাল করার কারণে ডিগ্রি (বিএসসি) প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে একটা ক্ল্যাশ তৈরি হয়, সেটা কাম্য নয়। আমরা কিন্তু আজকে পাশাপাশি বসে আছি। আমরা কিচ্ছু মনে রাখিনি। এগুলো যেন ভাইরাল না করে, এই জিনিসটা যেন এখানেই স্টপ হয়ে যায়। কেউ যাতে এটা নিয়ে রাজনীতি না করতে পারে। সে (রনি) আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমার দিক থেকে তার প্রতি কোনো খেদ নেই, হুমকি নেই।’

ভিডিওতে মো. রনি বলেন, আমরা সারাদিন কাজ করি। কাজ করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে নদীভাঙন মোকাবিলা করতে আমরা অনেক প্রেশারে আছি। ঘটনার দিন আমারও মাথা ঠিক ছিল না। আমিও ভুল করেছিলাম। আমার চাকরি জীবনের বয়সতো বেশি না। তাই অভিজ্ঞতাও কম। মানুষ মাত্রই ভুল করে। আমিও ভুল করি, স্যারও ভুল করেন। আমরাতো মানুষ, যন্ত্র না যে ভুল হবে না। আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি, স্যার আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।

ঘটনার দিন আমারও অনেক ভুল ছিল। এজন্য আমি অনেক দুঃখিত। আসলে আমাদের কাছ থেকে এই বিষয়গুলো কাম্য নয়। আর যা হয়েছে তা ভুলে যাওয়াটাই ভালো। সবকিছু ভুলে আমরা নতুন করে শুরু করব। সবাই মিলেমিশে কাজ করব।

এর আগে ২৩ নভেম্বর বিকেলে নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ নিজ কক্ষে মো. রনিকে ডেকে নিয়ে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং এক পর্যায়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে চেয়ার থেকে ফেলে বুকের ওপর পা দিয়ে চেপে গলা টিপে ধরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে তাকে জবাই করার হুমকি দেন। 

ওই দিনই এ সংক্রান্ত একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। পরে রনির লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুল আহাদকে অসদাচরণ ও চাকরিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে ঢাকায় সংযুক্ত করা হয়।

মীর সামসুজ্জামান/এসপি