কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শনিবার উত্তেজনা বিরাজ করলেও রোববার দিনভর থমথমে ছিল ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ ক্যাম্পাস। এদিকে হঠাৎ করেই হল বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়ে মাত্র তিন দিন আগে হলে উঠা শিক্ষার্থীরা। বাধ্য হয়ে ভোগান্তি নিয়েই হল ছাড়তে হয়েছে তাদের। 

রোববার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সকালে জেলা ছাত্রলীগের অনুসারীরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল বের করে ও হল খুলে দেয়ার দাবি জানায়। অপরদিকে, মহানগর ছাত্রলীগের অনুসারীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে। 

এর আগে শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আনন্দ মোহন কলেজ ছাত্রলীগের ইউনিটকে জেলার অধীনস্থ ঘোষণা করে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এমন সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পরই উত্তপ্ত হয়ে উঠে ময়মনসিংহ নগরীতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপিঠ। এ নিয়ে মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ এবং হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় কলেজ কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য আবাসিক হল বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। 

হঠাৎ হল বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাসের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, ১ ডিসেম্বর হলে উঠেছি। ছাত্রলীগের বিবাদে হঠাৎ করে শনিবার রাতে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য হল বন্ধের ঘোষণা দেয়। বাড়ি থেকে কষ্ট করে এসে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে। কয়েক দিন পরে ফাইনাল পরীক্ষা, কী করব ভেবে পাচ্ছি না।

শারমিন সুলতানা নামে আরেক ছাত্রী বলেন, এমনিতেই করোনার জন্য পড়াশোনা করতে পারিনি, আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার হল বন্ধ করা হয়েছে। আমাদের এমন ভোগান্তিতে পড়তে হবে কখনো ভাবিনি। আশা করছি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবেচিন্তে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে।

এ ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমান উল্লাহ বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতি এড়াতেই হল বন্ধ করা হয়েছে। কলেজের আইনশৃঙ্খলা ও হোস্টেল স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কলেজের আওতাধীন ছাত্র ও ছাত্রী নিবাসসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমরা হলগুলো খুলে দেব।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলে কেউ কেউ পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আনন্দ মোহন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ জেলার অধিনেই থাকবে। 

অপরদিকে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নওশেল আহমেদ অনি বলেন, মহানগরের ভেতর অবস্থিত আনন্দ মোহন কলেজকে জেলার আওতায় নিয়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই এ সিদ্বান্তকে মানতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। তাই তারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছে। সেখানে জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে আমি শুনেছি। 

কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি তদন্ত ফারুক হোসেন বলেন, ক্যাম্পাস পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শিক্ষার্থীরাও হল ছেড়ে চলে গেছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় এজন্য পুলিশ সেখানে অবস্থান করছে। 

উবায়দুল হক/এমএএস