বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ নেতা হত্যা মামলায় ২৬ জনের নামে চার্জশিট
নিহত সাব্বির আহম্মেদ রাসেল
যশোরে বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহম্মেদ রাসেল হত্যা এবং তার বড় ভাই আল আমিনকে হত্যা চেষ্টা মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের মাদক কারবারি ও সাবেক ইউপি সদস্য শহীদুজ্জামান শহীদসহ ২৬ জনকে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে এই মামলার দুই আসামিকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৯ জানয়ারি) জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাসুম কাজী যশোর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন।
বিজ্ঞাপন
অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- এজাহারভুক্ত আসামি বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের মাঠপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলাম মোড়লের ছেলে সামিরুল ইসলাম, মৃত সাহাদৎ হোসেনের ছেলে শামীম, মিয়ারাজ মোড়লের ছেলে ইমদাদুল হক এমে, বালিয়া ভেকুটিয়া মাধঘোপাপাড়ার ফজলুর রহমানের ছেলে মাহবুব হোসেন বাবু ওরফে পিচ্চি বাবু, মৃত সেকেন্দার আলী সেগুনের ছেলে খায়রুল ইসলাম, আকরাম আলীর ছেলে হাসিব, আবু তাহের ড্রাইভারের ছেলে সবুজ, মৃত সলেমান মন্ডলের ছেলে রেজাউল ইসলাম, বালিয়া ভেকুটিয়ার আবু বক্কার সিদ্দিকী ওরফে সিদ্দিকের ছেলে শাহিন আলম, একই গ্রামের শ্মশানপাড়ার সানু ফকিরের দুই ছেলে সোহাগ ও সোহেল ফকির, ইদ্রিস আলী মাদ্রাজের ছেলে আমির হোসেন, দীনছে আলীর ছেলে জনি, বালিয়া ভেকুটিয়া কাঁঠালতলার মৃত রুহুল আমিনের ছেলে সেলিম, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মোশারেফ হোসেনের ছেলে আশিক, মোসলেম সরদারের ছেলে রমজান আলী, চাঁদপুর গ্রামের মান্নান হোসেন ওরফে আব্দুল মান্নানের ছেলে রনি হোসেন ওরফে ওমর আলী, পাকদিয়া গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে আলমগীর হোসেন, বড় ভেকুটিয়া গ্রামের ইনছার আলীর ছেলে এনামুল ও বালিয়া ভেকুটিয়া পশ্চিমপাড়ার আবুল হোসেনের ছেলে মতিয়ার রহমান।
তদন্তেপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের মাঠপাড়ার মশিয়ার রহমানের ছেলে মফিজুর, বালিয়া ভেকুটিয়া শ্মশানপাড়ার শানু মিয়ার ছেলে আনিস, বালিয়া ভেকুটিয়া কাঁঠালতলার মৃত আবুল বাসারের ছেলে সাব্বির, বড় ভেকুটিয়ার শহিদুল ইসলামের ছেলে মনিরুল ও বালিয়া ভেকুটিয়া মাধঘোপাপাড়ার মৃত সলেমান মন্ডলের ছেলে নুর নবী।
বিজ্ঞাপন
এই মামলা থেকে চান্দুটিয়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে হাবিব ও বালিয়া ভেকুটিয়ার সোনাই মোড়লের ছেলে লিটনের অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, আসামিরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি। শহীদুজ্জামান শহীদের নেতৃত্বে তারা এলাকায় খুন, মাদকের কারবার, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। আর এতে বিভিন্ন সময় বাধা দেন যশোর জেলা বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহম্মেদ রাসেল। এতে সন্ত্রাসীরা রাসেলের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়।
২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের শ্মশানপাড়ার রবিউল ইসলাম বাবুর মুদি দোকানের সামনে বসে রাসেলসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকর্মী মহামারি করোনায় অসহায়দের জন্য ত্রাণ দেয়ার তালিকা করছিলেন। এ সময় শহীদুজ্জামানের পোষ্য কয়েকজন সন্ত্রাসী বেপরোয়া গতিতে সেখানে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসে। এ সময় আস্তে মোটরসাইকেল চালানোর কথা বললে রাসেলকে খুন করার হুমকি দিয়ে চলে যায় তারা।
একইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে আসামিরা ধারালো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বাড়ির সামনে থেকে রাসেলকে জোর করে ধরে নিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এসময় রাসেলের বড় ভাই আলামিন সেখানে ঠেকাতে গেলে তাকেও কুপিয়ে আহত করে। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। স্থানীয়রা আহত রাসেল ও আলামিনকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। আর ওই সময় আলামিনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
পরদিন এ ঘটনায় নিহতের বাবা আবু সালেক মৃধা বাদী হয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সাবেক ইউপি সদস্য শহীদুজ্জামান শহীদসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন তৎকালীন কোতোয়ালি থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন্স) আহসানুল্লাহ চৌধুরী। পরবর্তীতে এসআই হায়াত মাহমুদ খান এবং সর্বশেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাসুম কাজী মামলাটি তদন্ত করেন।
মামলার বাদী নিহতের বাবা আবু সালেক মৃধা বলেন, যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।
জাহিদ হাসান/আরএআর