করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ ছিল দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছে। তবে অনেকেই এই সময়ে বিভিন্ন সৃজনশীল ও গবেষণাধর্মী কাজ করেছে। তেমনই একজন শিক্ষার্থী টাঙ্গাইল পৌরসভার আকুর টাকুরপাড়ার বাসিন্দা অরবিন্দ চন্দ রায়ের ছেলে সুদীপ্ত চন্দ রায়। 

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেছে সুদীপ্ত রায়। সে সরকারি এমএম আলী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দ্য গ্রেট পলিটিক্যাল লিডারশিপ নামে একটি ম্যাগাজিন বের করেছে। যা বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স সাইট অ্যামাজনে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও করোনাকালে অনলাইনের মাধ্যমে ইউনিসেফ, আইএমওসহ বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ধরনের কোর্সে অংশগ্রহণ করে সনদপত্রও অর্জন করেছে সে। 

জানা গেছে, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান  সুদীপ্ত রায়। তার বাবা অরবিন্দ রায় একটি বেসরকারি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন। তার মা সম্পা রানী দে গৃহিণী। তার ছোট একটি বোন রয়েছে। সুদীপ্ত টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন্স আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে সরকারি এমএম আলী কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে (বিজ্ঞান) পড়ছে। 

সুদীপ্তর সহপাঠীরা জানায়, ক্লাসের অন্যদের মধ্যে সুদীপ্ত আলাদা। ক্লাসের বাইরেও ওর আলাদা জ্ঞান রয়েছে। করোনাকালে যেখানে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়াসহ বিপথে গেছে, সেখানে জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করেছে সে। তার একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। এটা খুবই গর্বের খবর।

পরিবারের সঙ্গে সুদীপ্ত রায়

সুদীপ্ত চন্দ রায় বলে, করোনাকালে লকডাউনের কারণে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, তখন ভিন্ন কিছু করার স্বপ্ন জাগে।আমার বেশি পছন্দের বিষয় জলবায়ু। কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা যায়, কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এগুলো নিয়ে গবেষণা করি। এসব বিষয় নিয়ে অনলাইনে জাতিসংঘের একটি কোর্স সম্পন্ন করি। পরবর্তীতে কোর্সটি শেষ করার পর তারা আমাকে সনদপত্র দেয়। এছাড়া জাতিসংঘের আরেকটি ফোরামে অংশগ্রহণ করে সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করি। সেখানে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরি। এভাবে আরও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করে জলবায়ু বিষয়ক অভিজ্ঞতা অর্জন করি। 

পরে জলবায়ু পরিবর্তনরোধ ও করণীয় নিয়ে একটি ম্যাগাজিন আকারে বই লিখি। বইটি লিখতে আমার প্রায় ছয় মাস সময় লেগেছে। পরবর্তীতে বইটি অ্যামাজনে পোস্ট করি। অ্যামাজনের মাধ্যমে অনেক মানুষ আমার বইটি পড়ছে। বইটিতে জলবায়ু নিয়ে করণীয়, ব্যর্থতা ও জলবায়ুতে অর্থনীতি প্রয়োগের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ব রাজনীতি নিয়েও বইটিতে লেখা রয়েছে।

সুদীপ্ত বলে, ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে জানতে পারি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাইবেরিয়ায় যে বরফগুলো রয়েছে সেগুলো প্রতিনিয়তই গলে যাচ্ছে। প্রচুর পরিমাণ মানুষসহ পশুপাখি মারা যাচ্ছে। এটা পৃথিবীতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রতিবছর ৭০ লাখ মানুষ জলবায়ুর কারণে মারা যাচ্ছে। জলবায়ু প্রতিরোধে যতটুকু করার প্রয়োজন আমি চালিয়ে যাচ্ছি আমার অবস্থান থেকে। তবে বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু নিয়ে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। জলবায়ু বিষয়ে সরকারের বাজেট বাড়ানোর পাশাপাশি এই বিষয়ে জেলায় জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। এর সঙ্গে প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

 

সুদীপ্তর মা সম্পা রানী দে বলেন, ছোটবেলা থেকেই তার মেধা ছিল অন্যরকম। পড়ালেখার বাইরেও তার বাবার সঙ্গে জলবায়ু, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করতো। জানতামই না সে বই লিখেছে। পরে জানলাম জলবায়ু নিয়ে বই লিখেছে। এছাড়া সে বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে অনেক সার্টিফিকেট পেয়েছে।

সুদীপ্তর বাবা অরবিন্দ চন্দ রায় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ছেলের বই অ্যামাজনে প্রকাশ হয়েছে। পৃথিবীর অনেক মানুষ তার লেখা পড়বে, এটা খুবই গর্বের এবং আনন্দের। জলবায়ু নিয়ে আমাদেরও আগ্রহ ছিল। নিজের প্রচেষ্টায় সে এতদূর পর্যন্ত এসেছে।
 
টাঙ্গাইল সরকারি এমএম আলী কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুজ্জামান মিঞা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে। ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে গাছ পোড়ানো, নদী শাসনের নামে এর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে স্বাভাবিক গতিরোধ করা, বনের গাছপালা ধ্বংস হওয়ায় পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে। এর প্রভাব পড়ছে মানবজীবন ও প্রাণীকূলের ওপর। পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই কলেজের যে শিক্ষার্থী জলবায়ু নিয়ে কাজ করছে তাকে স্বাগত জানাই। তার এই কাজে কলেজ কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর