কানাডায় নিহত সাকিবের গ্রামের বাড়ি

সব জমিজমা বিক্রি করে ছেলেকে পড়াশোনার জন্য কানাডা পাঠিয়েছিলেন বাবা আসাদুজ্জামান। আশা ছিল ছেলে বড় ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ফিরবে। পড়াশোনাও প্রায় শেষের দিকে। তবে শেষ মুহূর্তে সব শেষ হয়ে গেল। কানাডা থেকে ছেলের মৃত্যুর খবর পেলেন বাবা।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ২নং জামাল ইউনিয়নের উল্যাহ গ্রামের আসাদুজ্জামানের ছেলে সামিউজ্জামান সাকিবের মৃত্যুর খবরে পরিবারে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। সাকিব কানাডার মানিতোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। স্থানীয় সময় গত বুধবার (২৭ জানুয়ারি) ‘রেড রিভার’ নামে একটি নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে উইনিপেগ সিটি পুলিশ। সাকিবের অকাল মৃত্যুতে স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

উল্যাহ গ্রামে গিয়ে জানা যায়, আসাদুজ্জামান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তিনি সপরিবারে ঢাকায় থাকেন। তার ছোট ছেলে সামিউজ্জামান সাকিব ২০০৭ সালে কালীগঞ্জ শিশু একাডেমি স্কুল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাস করে বৃত্তি লাভ করে। পরে নলডাঙ্গা সরকারি ভূষণ হাইস্কুল থেকে ২০১০ সালে জেএসসি পাস করে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে। এরপর বাবার সঙ্গে সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করায় জেএসসি পাসের পর ঢাকার রেসিডেনশিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়। সেখান থেকে ২০১৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ ও ২০১৫ সালে এইচএসসি পাস করে। এরপর কানাডার মানিতোবা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভতি হয়। 

সাকিবের সেজো চাচা জামাল ইউনিয়নের উল্যাহ গ্রামের মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, বড় ভাই আসাদুজ্জামান ঢাকায় থাকেন। কয়েকদিন আগে তিনি জানিয়েছিলেন- ছেলে (সাকিব) বলেছে বাবা তোমাকে আর আমার জন্য জমি বিক্রি করে টাকা পাঠাতে হবে না। তোমার জমিজমা যা নষ্ট হয়েছে তার দ্বিগুন কিনে দিব। পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু সাকিবের মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে গেল। 

মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সাকিবের বাবা আসাদুজ্জামান বলেন, সাকিবকে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কানাডার মানিতোবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেছিলাম। সেখানে সে কম্পিউটার সাইন্সে ৪র্থ বর্ষে লেখাপড়া করতো। সাকিব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই একটি বাসায় রুম ভাড়া নিয়ে থাকতো। আশপাশে কয়েকটি রুমে কিছু বাংলাদেশি ও ভারতীয়রা থাকতো। হঠাৎ গত ৯ জানুয়ারি থেকে তাকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে তার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়। পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এক শিক্ষক পুলিশকে জানান। পরে কানাডিয়ান পুলিশ গত বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের নির্জন একটি লেকের পাশ থেকে সাকিবের মরদেহ উদ্ধার করে। ওইদিন রাতেই কানাডিয়ান পুলিশ মোবাইলে আমাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে। মরদেহ এখনও সেখানকার পুলিশ হেফাজতে আছে।
 
কাঁদতে কাঁদতে আসাদুজ্জামান বলেন, বড় ছেলে হাসিবুজ্জামানকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার পাস করিয়েছি। বড় ভাইয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাকিবও বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে বলেছিল। এমন আশায় তাকে কানাডায় পাঠিয়েছিলাম। জীবনের সব উপার্জন, গ্রামের সব জমিজমা বিক্রি করে তার জন্য খরচ করেছি। এখন আমার সব শেষ।

জামাল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ফসিয়ার রহমান বলেন, পরিবারের জন্য এটা খুবই কষ্টের। আমরা সাকিবের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। 

আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর