রাজশাহীর পুঠিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিল উদ্দিন আহমেদকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা একটি মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। রোববার (১২ ডিসেম্বর) সকালে রাজশাহী বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোসা. ইসমত আরা তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৮ ডিসেম্বর সকালে ওসি সাকিল এই আদালতে আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনও চেয়েছিলেন। কিন্তু মামলার মূল নথি না থাকায় জামিন শুনানি হয়নি। পরে রোববার তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের আইনজীবী আসলাম সরকার জানান, রোববার সাকিল উদ্দিন আহমেদ জামিন চেয়ে আদালতে হাজির হন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ওসি সাকিল আহমেদ (বিপি-৭১০১০০৭৯৫১) চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা এলাকার ডা. মইনউদ্দিন আহমেদের ছেলে। তিনি রাজশাহী নগরীর তেরখাদিয়া এলাকায় বসবাস করেন। ঘটনার পর তাকে সিলেট রেঞ্জ পুলিশে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১১ জুন পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার ‘এসএস ব্রিকস ফিল্ড’ নামে ইটভাটা থেকে শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা থানায় মামলা করেন। কিন্তু তার এজাহার গ্রহণ না করে তার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন ওসি। 

পরে মামলার এজাহার ও প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) সংগ্রহ করে দেখেন, তার দেওয়া আটজন আসামির নাম নেই এজাহারে। পাল্টে দেওয়া হয়েছে ঘটনার বিবরণও। আসামির তালিকায় যোগ করা হয়েছে ছয়জনের নাম। এ নিয়ে নিহতের স্ত্রী সাজেদা বেগম আদালতে নালিশি মামলা করেন।

এই এজাহারের বিষয়ে তখনই নিগার সুলতানা ও তার মা সাজেদা বেগম আপত্তি জানিয়ে বলেন, এই এজাহার তাদের নয়। পরবর্তীতে নিহত নুরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৮ জুলাই আইজি, রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি ও রাজশাহীর এসপির কাছে এজাহার বদলে ফেলার অভিযোগ দাখিল করেন ভুক্তভোগীরা। এরপরও প্রতিকার না পেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে নিহতের পরিবার। 

এরপর বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় পিবিআইকে। এছাড়া ওই ওসি সাকিলের বিরুদ্ধে ওঠা সকল অনিয়ম তদন্ত করতে দুদককেও নির্দেশ দেন আদালত।

হাইকোর্টের নির্দেশে অভিযোগ তদন্ত করে ওসি সাকিলসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান তালুকদার। এই প্রতিবেদন গত ৬ নভেম্বর হাইকোর্টে পাঠানো হয়। 

এরপর ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ওসি সাকিলকে অভিযুক্ত করে আদেশ দেন। এরপর ওসি সাকিল ২০২০ সালের ১ মার্চ আপিল করেন। পরে তার সেই আপিল আবেদন খারিজ করে দেন উচ্চ আদালত। এ নিয়ে এই বছরের ২৪ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)।

দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতো দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নিঃসন্দেহে গুরুতর। যা দণ্ডবিধি ১৬ ও ১৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওসি সাকিল পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের প্রবিধান ২৪৩ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারা সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধমূলক অসদাচরণ করেছেন তিনি।

তাছাড়া ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন ওসি সাকিল। আর এ কারণেই তার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হলো। এই ঘটনায় অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদেরও আসামির তালিকায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এসপি