পাবনায় বিয়ের কথা বলে পদ্মা নদীর পাড়ে ডেকে নিয়ে বিধবা হেনা খাতুনকে (২৬) হত্যার দায়ে এক যুবকের মৃত্যুদণ্ড ও তার সহযোগীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে পাবনার বিশেষ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আহসান তারেক এ রায় দেন।

নিহত হেনা খাতুন পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বোনাইনগর ফলিয়াদহ মহল্লার মৃত খন্দকার মনছুর হোসেনের স্ত্রী 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম রফিকুল ইসলাম ওরফে রহিম (৪০)। তিনি আটঘরিয়া উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের জাদ্দুল প্রামানিকের ছেলে। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম নুরুল ইসলাম (৩৮)। তিনি চৌবাড়িয়া গ্রামের ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের বলরামপুরে পদ্মা নদীর পাশে একটি মরদেহ দেখতে পেয়ে  স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ নিহতের পরিবারকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করে। পরবর্তীতে টিভিতে সংবাদ প্রচার করেও পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন ১৯ আগস্ট সকালে সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে ভিকটিমের মোবাইলে কল লিস্টের সূত্রপাত ধরে ঘটনার প্রকৃত তথ্য ও আসামি শনাক্ত করে দ্রুত আটকের ব্যবস্থা করেন। 

ঘটনাসূত্রে জানা যায়, স্বামী মারা যাওয়ার পর ফরিদপুরের নিজ গ্রাম থেকে মালামাল গুছিয়ে নিয়ে শহরের মহেন্দ্রপুর এলাকায় ছেলেকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন হেনা খাতুন। পরে রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়ের কথা বলে রফিকুল তাকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে পদ্মা নদীর পাড়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ নদীর পাড়ে ফেলে রাখে। 

এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। এ মামলায় ১৫ জন সাক্ষ্য দেন। শুনানির পর আদালত হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত রফিকুলকে মৃত্যুদণ্ড এবং তার সহযোগী নুরুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সঞ্জয় কুমার বলেন, আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। সেখান থেকে আসামি নিরপরাধ প্রমাণিত হয়ে খালাস পাবেন। 

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দেওয়ান মজনুল হক বলেন, এ মামলায় হত্যা প্রমাণিত হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে রফিকুলকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। অপরজন সহযোগিতা করায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এখানে সাজা কমানোর কোনো সুযোগ নেই। 

রাকিব হাসনাত/আরএআর