মাসুদুল আলম মারুফ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) চান্স পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়া পঞ্চগড়ের গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী মাসুদুল আলম মারুফের পাশে দাঁড়িয়েছে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) জহরুল ইসলাম আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। 

মাসুদুল আলম মারুফ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৭৭২তম হয়ে ‘যোগাযোগ বৈকল্য’ বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তবে টাকার অভাবে তার ভর্তি অনিশ্চিত ছিল। 

জানা যায়, মাসুদুল আলম মারুফ জেলা শহরের রামের ডাঙা এলাকার জাফর ইকবাল-মকছেদা খাতুন দম্পতির বড় ছেলে। ছোট বেলা থেকেই মারুফ মেধাবী। পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৬৭ পেয়ে তিনি উত্তীর্ণ হন। ২০২০ সালে পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পান। তিন ভাইয়ের মধ্যে মারুফ বড়। তার মোজো ভাই মাহামুদ আলম মামান পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এবং ছোট ভাই লওহে মাহফুজ মুহিবের বয়স ৫ বছর। 

মারুফের পরিবারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মারুফের বাবা জাফর ইকবাল এক সময় ছোটখাটো ডিলারশিপের ব্যবসা করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। কয়েক বছর আগে হঠাৎ করে ব্যবসায় লোকসান হয় এবং তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত কয়েক বছর ধরে ধারদেনা করে কোনো রকমে চলছে তার পরিবার। 

এদিকে মারুফ এসএসসি পরীক্ষা পাস করার পর থেকে নিজের পড়ালেখা চালাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি করাতে শুরু করেন। প্রতিদিন একটি ভাঙা সাইকেল নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে টিউশনি করিয়ে লেখাপড়া করে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায় মারুফ। পরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে থাকেন। মেধার যোগ্যতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে ভর্তির সুযোগ পান। তবে অসুস্থ বাবার পক্ষে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। এতে মারুফের স্বপ্ন ভেঙে পড়তে শুরু করে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। 

এদিকে মারুফ ভেঙে না পরে অর্থের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন না জানিয়ে জেলা প্রশাসক জহরুল ইসলামের কাছে আবেদন করেন। পরে জেলা প্রশাসক তার বিশ্ববিদ্যায়ের ভর্তির যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নেন। 

এ বিষয়ে মাসুদুল আলম মারুফ বলেন, আমার বাবা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমি টিউশনি করিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ বহনের পাশাপাশি তাদের সহযোগিতা করতাম। সারাদিন টিউশনি করিয়ে রাতে পড়তে বসতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করব এটা আমার স্বপ্ন ছিল। অনেক কষ্টে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলাম, তখন অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছিলাম না। পরে জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম স্যার আমার ভর্তির যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ ও ঋণী। 

এ বিষয়ে মারুফের বাবা জাফর ইকবাল বলেন, আমার বড় ছেলে নিজে কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পেলেও বাবা হয়ে তার ভর্তির টাকাটা জোগাড় করে দিতে পারিনি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমার ছেলের ভর্তির যাবতীয় খরচ বহন করায় আমি জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞ। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন সে যেন একদিন বড় হয়ে দেশের জন্য জাতির জন্য ভালো কিছু করতে পারে। 

এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহরুল ইসলাম বলেন, মারুফ নামে ওই মেধাবী শিক্ষার্থী নিজে কষ্ট করে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটা অনেক গর্বের। আমরা যখন জানতে পারলাম সে অর্থের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না, ঠিক সেসময়ে জেলা প্রশাসন তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছে। আমরা তার মঙ্গল কামনা করি। সে যেন লেখাপড়া করে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে- এই কামনা করি। 

রনি মিয়াজী/আরএআর