গত ২৮ জানুয়ারি মোস্তাফিজুরকে ‘রাজাকারপুত্র’ আখ্যায়িত করে কমলনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল সংবাদ সম্মেলন করে

রাজাকারপুত্র বলে অভিযোগ ওঠায় লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি পদ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে  যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহেরকে সভাপতি পদে মনোনীত করা হয়েছে। রোববার (৩১ জানুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ই-মেইলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) পাঠানো চিঠিতে আবু তাহেরকে সভাপতি মনোনীত করার বিষয়টি জানানো হয়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ৩০ জানুয়ারি আবু তাহেরের সভাপতিত্বে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের সভা হয়। এতে কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ও শরীফ উল্যাহ উপস্থিত ছিলেন। 

এ সময় সন্দেহভাজন ২১ জন মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্র ও প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে কমিটি। তবে তাদের সাক্ষ্য ও প্রমাণাদিতে কমিটি সন্তুষ্ট নয়। তাদেরকে বিস্তারিত সাক্ষ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করে কমিটির কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারলেই তাদের পক্ষে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তা না হলে যথাসময়েই তাদের বিপক্ষে প্রতিবেদন দিতে হবে।

অন্যদিকে সারাদেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে জেলার কমলনগর উপজেলায় ৩০ জানুয়ারি ২১ জনের যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। এ লক্ষ্যে জামুকা ২৫ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমানকে সভাপতি মনোনীত করে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে তালিকা পাঠায়। কিন্তু ২৮ জানুয়ারি বিকেলে মোস্তাফিজুরকে ‘রাজাকারপুত্র’ আখ্যায়িত করে কমলনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল কার্যালয়ে স্থানীয় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবাদ সম্মেলন করেন। এ নিয়ে এর আগে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নীতিমালা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের উপজেলা কমিটিতে যুদ্ধকালীন কমান্ডার অথবা ভারতীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সভাপতি করার কথা রয়েছে। কিন্তু  মোস্তাফিজুর রহমান সেই ক্যাটগরির কেউ নয়। এমনকি তিনি একজন বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা। তাছাড়া তার বাবা আব্দুল গফুর তহশিলদার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং রাজাকারদের সংগঠক ছিলেন। চাচা আব্দুল হালিমও রাজাকার ছিলেন। মূলত রাজাকার বাবা ও চাচাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য গুপ্তচর হিসেবে মোস্তাফিজ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে অনুপ্রবেশ করেন এবং মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যাও করেছিল। 

অভিযোগের বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। রাজাকার ইস্যুতে আমার বাবার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও সত্য নয়।

জানতে চাইলে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ২১ জন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষ্য ও প্রমাণাদি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। কিন্তু তা সন্তোষজনক নয়। সঠিক সাক্ষ্য, তথ্য ও প্রমাণসহ সহযোদ্ধাদের (বেঁচে থাকা) উপস্থিত করতে তাদেরকে বলা হয়েছে। তাদেরকে কয়েক দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই তথ্য-প্রমাণ দিতে হবে। যথা সময়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর