কেন্দ্র থেকে দেওয়া ফলাফলে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, নারী সদস্য ও একটি ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদের প্রার্থী। ফলাফলের দাবিতে তারা উলিপুর উপজেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঘুরছেন।

তাদের দাবি, কেন্দ্রে ফলাফল দিয়ে চলে আসেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। কিন্তু উপজেলা থেকে ফলাফল দেওয়া হচ্ছে না। তারা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও করেছেন। এদিকে, সোমবার রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ফলাফলের দাবিতে প্রার্থীর সমর্থকরা নির্বাচন অফিস ও ইউএনও অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

সাহেবের আলগা ইউনিয়নের মোটরসাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ইউনয়ন বিএনপির সভাপতি) মোজাফফর হোসেনের অভিযোগ, ২৬ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হয় ৯টি কেন্দ্রে। ভোট শেষে ৯টি কেন্দ্রে ভোট গণনা করা হয়। সব কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করে এবং ফলাফলপত্র দেন প্রিসাইডিং অফিসাররা।

ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নামাজেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে ভোট গণনা করা হয়। ফল ঘোষণা করে ফলাফলপত্র বিদ্যালয় ভবনের দেয়ালে লাগিয়ে দেন তারা। এ হিসেবে সর্বোচ্চ ২৫৮১ ভোট পেয়ে আমি নির্বাচিত হই। জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল বাতেন ২ হাজার ৩৮৪ ভোট পেয়ে আমার কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, পরে ফলাফল নেওয়ার জন্য উপজেলায় আসলে তারা আমাকে জানায় নামাজেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে কে বা কারা বিশৃঙ্খলা করেছে, সে জন্য ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে ফলাফল দেওয়া হয়েছে। তখন কোনো ঝামেলা হয়নি। এখন ফলাফল পাচ্ছি না।

একই অবস্থায় পড়েছেন ওই ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী কল্পনা আক্তার। তিনিও ভোটের রাত থেকে উপজেলায় ঘুরছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, কষ্ট করে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চেয়ে সুষ্ঠু ভোটে আমি জিতেছি। ৩টি ওয়ার্ডের রেজাল্ট শিট আমার হাতে রয়েছে। রাত থেকে ঘুরছি কিন্তু এখানে চূড়ান্ত ফলাফল দিচ্ছে না। 

একই অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট ৬ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদের প্রার্থী আব্দুর রব। প্রার্থীদের অভিযোগ, ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ধামশ্রেণি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার পাল ও রিটার্নিং কর্মকর্তা উলিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ মো. তারিকুল ইসলাম কেন্দ্র থেকে ফলাফল নিয়ে এসে উপজেলার নির্ধারিত কন্ট্রোলরুমে না গিয়ে কর্মকর্তার নিজস্ব কার্যালয় (উপজেলা মাধ্যমিক অফিসে) বসে রাত ৪টা পর্যন্ত ফলাফল পরিবর্তনের অপচেষ্টা করেন। সেখানে প্রার্থী ও সমর্থকদের তোপের মুখে পড়েন। তারপর রহস্যজনক কারণে ফলাফল স্থগিত করা হয়।

তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ভোটের দিন রাত ১টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রতন কুমার পাল তার কাছে কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে পৌঁছায়নি। সে কারণে চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। যদিও প্রার্থীরা বলছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ভোট শেষে ফলাফলসহ সকল সরঞ্জাম সুষ্ঠুভাবে নিয়ে আসেন।

গত সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ভোটাররা ফলাফলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করেন। 

এ সময় ওসি ইমতিয়াজ কবির জানান, ওই কেন্দ্র থেকে ফলাফলসহ সবকিছু নিয়ে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছায় দিয়েছি। নির্বাচন কর্মকর্তা বিষয়টি কমিশনে লিখেছেন বলে জানতে পেরেছি।

সাহেবের আলগা ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা উলিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, সাহেবের আলগা ইউনিয়নে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। কিন্তু ফলাফল দিয়ে আসার সময় পরাজিত প্রার্থীর লোকজন নামাজের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রতন কুমার পালের ওপর চড়াও হন। এতে তিনি আহত হন। রাত একটা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের ফলাফল কন্ট্রোল রুমে না আসায় ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। গভীর রাতে তার কার্যালয়ে ফলাফল নিয়ে আসার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব বলেন, নির্বাচন কমিশন বরাবর লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমরা এখনও চিঠি পাইনি।

উল্লেখ্য, ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোজাফ্ফর হোসেনসহ ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এরমধ্যে মোটরসাইকেল প্রতীকে মোজাফ্ফর হোসেন পেয়েছেন ২ হাজার ৫৮১ ভোট। এছাড়াও লাঙল প্রতীকে আব্দুল বাতেন ২ হাজার ৩৮৪, গোলাম মোস্তফা চশমা প্রতীকে ২ হাজার ১৩৭, ঘোড়া প্রতীকে শাহজামাল ১ হাজার ৬৪০, আনারস প্রতীকে সিদ্দিক আলী মন্ডল ৮২৯ ভোট এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী লুৎফা বেগম প্রধান নৌকা প্রতীকে ১ হাজার ৭৩২ ভোট পেয়েছেন।

জুয়েল রানা/এমএসআর