জিশান শিকদার রনি

সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়েছে বরগুনার বেতাগীর করুনা গ্রামের জিশান শিকদার রনি (১৭)। ঘটনার পর তাকে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। রনি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নয়। তারপরও খুঁজে চলেছে লঞ্চে থাকা তার মা ও বোনকে। 

সোমবার (২৭  ডিসেম্বর) বিকেল থেকে অজ্ঞাতদের শনাক্ত করতে বরগুনা সদর হাসপাতালে স্বজনদের ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ৪ সদস্যের একটি টিম। খবর পায়ে নমুনা দিতে বরিশাল হাসপাতাল থেকে বরগুনায় ছুটে আসে রনি।

রনির স্বজনরা জানান, লঞ্চে আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া রনির মা রুনা বেগম (৩৫) ও ছোট বোন রুশনি আক্তার লিমার (১২) মরদেহ খুঁজে পেতে দগ্ধ পা নিয়েই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে ছুটে এসেছে রনি।

জিশান শিকদার রনি বলে, নানু অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে মা ও ছোট বোনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) বরগুনাগামী এমভি অভিমান-১০ লঞ্চে বেতাগীর উদ্দেশ্যে রওনা দেই। লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় ছিলাম আমরা। রাতের খাবার খেয়ে আমরা তিনজনই ঘুমিয়ে ছিলাম। গভীর রাতে হঠাৎ যাত্রীদের চিৎকার শুনে লাফিয়ে উঠে দেখি লঞ্চে আগুন জ্বলছে। তাড়াহুড়া করে মাকে নিয়ে আমি ছাদে চলে যাই। বোন ঘুমে থাকায় ওকে নিতে পারিনি। 

চারিদিকে আগুন দেখে কোনো উপায় না পেয়ে আমার সঙ্গে মাকেও নদীতে ঝাঁপ দিতে বলে আমি ঝাঁপিয়ে পড়ি। প্রায় এক ঘণ্টার মতো সাঁতরে নদীর কূলে উঠে পেছনে তাকিয়ে আতঙ্কে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। যখন জ্ঞান ফিরে পেলাম তখন দেখি আমার পাশে মা ও বোন নেই। এখনো আমার মা ও ছোট বোনের কোনো সন্ধান পাইনি। যদি মরদেহও পেতাম নিজেকে একটু সান্ত্বনা দিতে পারতাম।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। লঞ্চটি ভাসতে ভাসতে পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকার সুগন্ধা নদীর তীরে আটকে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ ৫১ জনের তালিকা দিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

সেয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর