স্বামী আবু ইউসুফ, দুই সন্তান অলি উল্ল্যাহ ও আমান উল্ল্যাহকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের পেলাইদ গ্রামে গৃহিণী শাহানাজ আক্তারের (৩৫) সংসার। বাড়ির পাশেই পেলাইদ দারুসুন্নাহ দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার পদে স্বামী চাকরি করেন। দুই ছেলে টঙ্গীর তামিরুল মিল্লাত মাদরাসার বোর্ডিং থেকে পড়াশোনা করেন। স্বামী মাদরাসায় চলে যাওয়ার পরই পুরো বাড়িতে একাই থাকেন শাহানাজ।

সাংসারিক কাজ শেষে বাড়িজুড়েই একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা সব সময়ই তাকে পীড়া দিতো। বাড়িতে অলস সময়টুকু কাজে লাগানোর চিন্তা করতেন সব সময়ই। সে চিন্তা থেকেই বাড়ির আঙিনায় তিনি রোপণ করেছেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফলের গাছ, বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনে রোপণ করেছেন ফুলেরও গাছও। তবুও আরও ভালো কিছু করার ইচ্ছা মনে পুষতেন শাহনাজ।

মনের ইচ্ছার কথা জানান তার ভাই ফখরুল ইসলামকে। ভাই ফখরুল ইসলাম তাকে কাদারনাথ মুরগি পালনের পরামর্শ দেন। পরে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বোনকে পেলাইদ গ্রামে ২০০ কাদারনাথ মুরগির বাচ্চা ক্রয় ও শেড তৈরি করে দেয় ভাই ফখরুল। এরপরই সফলতা ধরা দেয় শাহানাজকে। মুরগি পালন শুরুর কয়েক মাস পরই ভাইয়ের দেওয়া টাকা পরিশোধ করে এখন তিনি প্রতি মাসে আয় করছেন অর্ধলাখ টাকা।

শাহানাজের সফলতার গল্প শুনতে রোববার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনায় তিনি গড়ে তুলেছেন ইউনিক কাদারনাথ ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারি নামে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানেই কাজ করছিলেন তিনি।

গৃহিণী শাহানাজ বলেন, স্বামীর আয়ে তার সংসার বেশ ভালোই চলছিল। সংসারে কোনো পিছুটান ছিল না। তবুও ঘরে বসে থাকার চাইতে, কিছু করলে আয়ের পাশাপাশি সময় ভালো কাটবে সেই ইচ্ছাটি আমার বড় ভাইয়ের কাছে বলি। তিনি শোনামাত্রই কাদারনাথ মুরগি পালনে উৎসাহিত করেন।

পরে তিনি ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ভারত থেকে ২০০ কাদারনাথ মুরগির বাচ্চা ও বাড়ির আঙিনায় একটি মুরগির শেড তিনি করে দেন। পরে কাদারনাথ মুরগি পালনের আয় দিয়ে ভাইয়ের টাকা পরিশোধ করে এখন তা ১০/১২ লাখ টাকার লাভ গুনছেন। এছাড়াও তার মাসিক আয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

তিনি জানান, শুরুতে প্রতিবেশীরা কাদারনাথ মুরগি দেখে নানা ধরনের উপহাস-বিদ্রুপ করতো। এখন তারা আমার কাছ থেকে কাদারনাথ মুরগি পালনের নানা বিষয়ে জানতে চাচ্ছে, আমিও তাদের নানা তথ্য, পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি। আমি চাই তারাও আমার মতো স্বাবলম্বী হোক।

শাহানাজ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মুরগির বিক্রির ভিডিও ছেড়ে দেওয়া হলে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে তার বাড়িতে আসে। এছাড়াও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মুরগি ও ডিম অর্ডার দেয়।

পরে কুরিয়ার সার্ভিসে ডিম এবং দেশের বিভিন্ন জায়গার চলাচলকারী বাসে বিশেষভাবে প্যাকেটজাত করে মুরগি পাঠানো হয় এবং টাকা বিকাশে পরিশোধ করে দেয়। মুরগির পাশাপাশি কাদারনাথ মুরগির প্রতিটি ডিম ৫৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। এখন তার ব্যক্তিগত হাত খরচের টাকা, সংসারের টাকা স্বামীর কাছে চাইতে হয় না বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, এলাকায় ব্রয়লার-লেয়ার মুরগির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যারা ব্রয়লার-লেয়ার মুরগি পালন করে তারা এক ব্যাচ মুরগি পালার পর লাভের মুখ দেখলেও দ্বিতীয় ব্যাচে অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়। কিন্তু কাদারনাথ মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি, পালনে ঝুঁকি কম। চিকিৎসক-ঔষধপত্রে খুব বেশি খরচ নেই। তাই অন্যান্য মুরগির চাইতে খরচ অনেকাংশে কম।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান পলাশ বলেন, শাহনাজ বেগম বর্তমান সমাজে এক আইকন। এক নারী হয়ে তিনি কাদারনাথ মুরগি পালনে বেশ সফলতা দেখিয়েছেন। গত প্রাণিসম্পদ মেলায় তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং দ্বিতীয় স্থান দখল করেছিলেন। তাকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এমএসআর