‘এই শীতের রাইতত ঠিক মতন নিন্দাবা পারু না। সারাদিন ভিক্ষা করে রাইতত জারের তানে নিন্দ ধরে না। আইজ স্যার আসে একটা কম্বল দিল। এলা রাইতত শান্তিতে নিন্দাবা পারিম।’

জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছ থেকে শীতের রাতে কম্বল পেয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতি জানাচ্ছিলেন ভিক্ষুক মোবারক (৫৫)। 

গত শনিবার (১ জানুয়ারি) রাতে বছরের প্রথম দিনে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে শীতার্ত অসহায় মানুষের মাঝে প্রায় ২শ কম্বল বিতরণ করেন ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান ও তার পরিবার। 

শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি মার্কেটের নিচে ঠান্ডায় জড়সড় হয়ে ঘুমিয়ে থাকা মোবারককে ডেকে কম্বল দেন জেলা প্রশাসক। সারাদিন ভিক্ষা করে খাওয়ার ব্যবস্থা হলেও রাতে মার্কেটের নিচে নিচে মোবারক। ঠান্ডায় কোনো কম্বল না থাকায় একটি ছেঁড়া বস্তা গায়ে দিয়ে শুয়েছিলেন। কম্বলটি পেয়ে আবেগে কান্না করেন এবং দোয়া করেন মোবারক।

এ সময় বাসস্ট্যান্ড এলাকার রিকশাচালক মোখলেসুরকেও কম্বল দেন জেলা প্রশাসক। মোখলেসুর বলেন, সারাদিন রিকশা চালাই। সরকারের পক্ষ হতে শীতে কম্বল দেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কম্বল নেওয়া সম্ভব হয় না। আজ হঠাৎ স্যার এভাবে কম্বল দিবে কোনো দিন ভাবতেও পারিনি। 

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের বারান্দায় শীতে জড়সড় হয়ে বসে থাকা এক বৃদ্ধকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে কম্বল দেন জেলা প্রশাসকের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। বৃদ্ধ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার পর দুই হাত তুলে দোয়া করেন। 

বৃদ্ধ বলেন, ‘মোর বেটি অসুস্থ। হসপিটালত ভর্তি করাইছু। ওইঠে মোক থাকিবা দেয় না, ওইতানে বাহিরত বসে আছু। কাপড়ও আনু নাই, ওইতানে ঠান্ডায় কাঁপেছিনু। কুণ্ঠে থেকে যে মাইগেনা আসে মোক কম্বল দিল, মুই তো বুঝিবার পারিনু। আল্লাহ ওমাহর ভালো করিবে।’

এর আগে জেলা প্রশাসক ও তার পরিবার শহরের কালিবাড়ি এলাকার হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কম্বল বিতরণ করেন। এছাড়াও শহরের রেলস্টেশন, রোড এলাকা, হাসপাতাল, চৌরাস্তাসহ রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।

পরে জেলা প্রশাসকের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের কাছে বছরের প্রথম দিনে এমন উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। বছরের প্রথম দিনটা একটু অন্যভাবে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই এই উদ্যোগ। আমার ছোট দুই সন্তানকেও নিয়ে বের হয়েছিলাম। তাদেরও জানা উচিৎ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। এভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমার অনেক ভালো লাগছে। 

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের প্রকোপ অনেক বেশি। প্রশাসনের সেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর জন্যই এই উদ্যোগ। বছরের প্রথম দিন স্ত্রী-সন্তানসহ শীতার্ত মানুষকে কম্বল দেওয়ার জন্য বের হয়েছি। এই শীতে যেসব মানুষ কষ্ট পাচ্ছে তাদের কষ্টগুলো কাছ থেকে জেনে সহযোগিতা করছে জেলা প্রশাসন। তবে সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে এই শীতে অনেক অসহায় মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। আমার সন্তানদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা এখন থেকেই শেখানোর চেষ্টা করছি। বছরের প্রথম দিনে অসহায় শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করতে পেরে ভালোই লাগছে।

এম এ সামাদ/আরএআর