সকাল ১০টা। শীতের তীব্রতা তখনো কাটেনি। গ্রামের ধুলোমাখা পথ ধরে খোলা মাঠে হাজির বিভিন্ন বয়সী হাজারো নারী-পুরুষ। সবার দৃষ্টি শীত নিবারণে উষ্ণতাময় কম্বলের দিকে। এক ঘণ্টার মধ্যে এক হাজার কম্বল শেষ। সবার মুখে উষ্ণতার হাসি। এই হাসি শীতের সকালের সূর্যের চেয়েও দীপ্তিময়। ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা কালজানি নদীর তীরবর্তী এলাকায় দাপুটে শীত মিশে গেছে সহস্রাধিক মানুষের উষ্ণ হাসিতে।

শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সকালে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের শালজোড় সরকার বাড়ি মোড়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। যেন শীতের সকালে পৌষের বিদায়লগ্নে বসেছিল হাজারো বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষের মেলা।

অ্যাম্বাসি অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব চায়না ইন বাংলাদেশ এবং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-চায়না অ্যালুমনির সহযোগিতায় ইমপ্যাক্ট ইনিশিয়েটিভ নদীতীরবর্তী এই দুর্গম এলাকার এক হাজার দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, গ্রামীণ জনপদের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবান মানুষ এবং উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে। আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারলে পরিবর্তন সম্ভব। এ সময় তিনি শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ আয়োজনের জন্য ভূয়সী প্রসংশা করেন।

রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের কার্যকরী সদস্য সাংবাদিক এনামুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনূর আলম, ভূরুঙ্গামারী প্রেসক্লাবের সভাপতি আনোয়ারুল হক, শালজোড় বিওপি ক্যাম্প কমান্ডার দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

দুর্গম চরাঞ্চলে শীতবস্ত্র পেয়ে খুশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। শালজোড় গ্রামের হবিউর রহমান (৮৫) বলেন, নদীর এপারে কেউ সহযোগিতা নিয়ে আসতে চায় না। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না। এ জন্য আমাদের কষ্টও বেশি। এবার শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় আমার মতো বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। আজ কম্বল পেয়ে ভালো লাগছে।

শতবর্ষী গঞ্জর আলী বলেন, কম্বল পানু, উপকার হইবে। মুই খুব খুশি বাবা। হামার মতো গরিবোক যদি সরকারের লোকেরা ঠিক মতো দ্যাকে, তাইলে কষ্ট আরও কমিল হয়।

কম্বল পেয়ে হবিউর রহমান ও গুঞ্জর আলীর মতো সবার মুখেই ছিল উষ্ণতার হাসি। কিষান-কিষানি থেকে শুরু করে দিনমজুর, শ্রমিক, হতদরিদ্র শিক্ষার্থী ও অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মাঝে এসব কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ