যশোরে তৃতীয় লিঙ্গের আব্দুল কাদের ওরফে লাভলী (৩০) খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে লাভলীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার দলের সদস্য নাজমা ও সেলিনা। 

গতকাল শনিবার (৮ জানুয়ারি) সকালে লাভলী একটি শিশুকে নাচানোর উদ্দেশ্যে কায়েমকোলা বাজারের দিকে যান। এ সময় তার সহযোগী হিসেবে নাজমা ও সেলিনাও ছিল। নাজমা ও সেলিনার পূর্বপরিকল্পনায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে একটি ইজিবাইকে তারা রওনা দেন। হালসা গ্রামের মাঠে একটি ব্রিজের ওপর পৌঁছা মাত্রই নাজমা, সেলিনা, তাদের সহযোগী শাকিল পারভেজ ও মেহেদী হাসানসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন তাদের পথরোধ করেন। এরপর প্রথমে পিস্তল দিয়ে লাভলীকে লক্ষ্য করে পরপর দুটি গুলি করেন। পিস্তলের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে লাভলীকে হত্যা করা হয়। 

রোববার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের কথা জানান যশোর জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপন কুমার সরকার। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শনিবার সকাল ৮টার দিকে যশোর-ছুটিপুর সড়কের হালসা ব্রিজের কাছে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত লাভলীর বাবা করিম মিস্ত্রী যশোর শহরের বেজপড়ার বাসিন্দা। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় রোববার নিহতের বোন সেলিনা খাতুন বাদী হয়ে একটি এবং অস্ত্র আইনে ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে আরেকটি মামলা মামলা করেছেন। শনিবার গভীর রাত থেকে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এদের মধ্যে দুইজন তৃতীয় লিঙ্গের রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র, গুলি ও বার্মিজ চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। 

গ্রেফতাররা হলেন- সদর উপজেলার দোগাছিয়া গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে শাকিল পারভেজ (২১), ঝাউদিয়া গ্রামের শাহাজুল বিশ্বাসের ছেলে মেহেদী হাসান (১৯), শহরতলীর খোলাডাঙ্গা গাবতলা স্কুলের পেছনের বাসিন্দা জিয়াউর রহমানের স্ত্রী নাজমা ওরফে হিজড়া নাজমা ও একই এলাকার সুজনের স্ত্রী সেলিম ওরফে হিজড়া সেলিনা।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই হত্যার কারণ উদ্ঘাটন ও খুনিদের গ্রেফতারে সদর উপজেলার হাশিমপুর, দোগাছিয়া, ঝাউদিয়া, নারাঙ্গালী ও ধর্মতলাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। ওইদিনই গভীর রাতে লাভলীকে হত্যার অভিযোগে ওই চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

হত্যার বিষয়টি তারা স্বীকার করে পুলিশকে জানিয়েছেন, হিজড়া সম্প্রদায়কে পরিচালনা করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, পূর্ব বিরোধের জের ও অন্যান্য আর্থিক কারণে তারা হিজড়া লাভলীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার সকালে লাভলীর ইজিবাইকের গতিরোধ করে শাকিল পারভেজ ও মেহেদী হাসান তাকে গুলি করেন। কিন্তু গুলি মিস হলে শাকিল বার্মিজ চাকু দিয়ে লাভলীর গলায় পোচ দিয়ে রক্তাক্ত করে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যান। 

জাহিদ হাসান/আরএআর