নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছোট ভাইয়ের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত : বরিশালের ডিসি
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার
নোয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) জসীম উদ্দিন হায়দারের ছোট ভাই লুৎফুল হায়দার লেলিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতোমধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বরিশাল জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মচারী লেলিনের প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার (১০ জানুয়ারি) রাতে কালেক্টরেট সহকারী সমিতির নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ে সদস্যদের নিয়ে তার পক্ষে ভোট চেয়ে সভা করেছেন কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার ঢাকা পোস্টকে জানান, তার ছোট ভাই লুৎফুল হায়দার লেলিনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নাগরিক অধিকার। এই অংশগ্রহণকে তিনিও সমর্থন করেন।
বিজ্ঞাপন
জেলা প্রশাসনের কর্মচারীদের তার ভাইয়ের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এটি খুবই সাধারণ একটি বিষয়। আমি জানতে চেয়েছি তোমরা (কর্মচারীরা) কোথায় যাবে, তারা জানিয়েছে লক্ষ্মীপুর হয়ে নিঝুম দ্বীপ, সুবর্ণচরে ঘুরতে যাবে। আসার পথে তারা সৌজন্যভাবে নোয়াখালীতে আমার ভাইয়ের সঙ্গে চা খেতে গিয়েছে। এটা হতেই পারে। কয়েকজন কর্মচারী চা খেতে গেছেন। তারাতো কর্মচারী, যদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যেমন একজন ম্যাজিস্ট্রেট গেলে বা কর্মকর্তা গেলে কথা ছিল। কিন্তু যারা গিয়েছে তারাতো কর্মচারী। ওরা তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, ওরা কী করতে পারে?
জেলা প্রশাসক বলেন, ওরা হয়তো বরিশালে চলে এসেছে। দুই-তিন দিনের ছুটি নিয়ে গেছে সেকশন থেকে। সেটা আমি জানিও না। ছুটি আমার সেকশন অফিসাররা দেন।
বিজ্ঞাপন
জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, মানুষ সামাজিক জীব, তার আত্মীয়-স্বজন থাকতে পারে। সে বেড়াতে যেতে পারে। আমি জেলা প্রশাসক, আমার ভাই প্রার্থী হতে পারবেন না, আমার ভাই রাজনীতি করতে পারবে না-তেমনতো নয়।
আপনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর লোক বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আপনার ভাই নৌকার বিরোধিতা করে নির্বাচন করছেন। বিষয়টি সাংঘর্ষিক কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, এই প্রশ্ন তুলতে পারেন না। সে (ছোট ভাই) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই পারে। এটি তার নাগরিক অধিকার। আপনি (প্রতিবেদক) সেভাবেই দেখেন।
তিনি আরও বলেন, এটি প্রত্যেক মানুষের অধিকার। ধরুন আপনি (প্রতিবেদক) আমার ছোট ভাই , আপনি যে কোনো রাজনীতি করতে পারেন। যে কোনো সিদ্ধান্ত আপনি নিতে পারেন, রাষ্ট্রের নাগরিক আপনি। তেমনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ তার (ছোট ভাইয়ের) একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে নৌকার বিরোধিতা করে কেন- এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি জেলা প্রশাসক।
এর আগে ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমানের মধ্যে বিবাদের সূত্র ধরে ৩০ আগস্ট চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে আয়োজিত একটি সভায় জসীম উদ্দিন হায়দার বলেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো প্রতিনিধি। আন্তরিকতা, ভালোবাসাকে কেউ দুর্বলতা মনে করবেন না। আমরা কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করি। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আপনাদের সেবা করতে এসেছি। আমরা কারো সঙ্গে শত্রুতা করতে আসিনি। আমরা কারো অন্যায় কাজের সমর্থন করতে আসিনি।’
প্রসঙ্গত, নোয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মোবাইল প্রতীক নিয়ে লুৎফুল হায়দার লেলিন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র সহিদ উল্যাহ্ খান সোহেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গতকাল সোমবার (১০ জানুয়ারি) রাতে কালেক্টরেট সহকারী সমিতির নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী লুৎফুল হায়দার লেলিনের পক্ষে ভোট চেয়ে সভা করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এল এ শাখার উচ্চমান সহকারী ও বরিশাল কালেক্টরেট সহকারী সমিতির সভাপতি মাহফুজুর রহমান। এ সময় তার সঙ্গে বরিশাল জেলা প্রশাসকের চতুর্থ শ্রেণির চার সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি নোয়াখালী পৌরসভায় ভোটগ্রহণ করা হবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর