আমি সেজে বসে থাকলেও তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি
পরিবারের পছন্দে বিয়ে করেন রুবেল মিয়া (২৩)। বিয়ের তিন দিন পর নিখোঁজ হন তিনি। এর ১০ দিন পর বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকার সরকারি বাঙলা কলেজের নির্মাণাধীন ভবন থেকে মৃত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার পরিবার। রুবেল মিয়া লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের খলাইঘাট গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
রুবেল মিয়ার নববধূ সার্জিয়া খাতুন বলেন, বিয়ের তিন দিন পর বাবার বাড়িতে আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ওই সময় আমাকে রেডি হওয়ার কথা বলে সেলুনে যাবেন বলে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। আমি সেজে বসে থাকলেও তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। এতগুলো দিন পর তার লাশ পেলাম। নতুন সংসার, নতুন জীবন কাকে নিয়ে কাটাব?
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে নিজ এলাকা লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের নিহত রুবেল মিয়ার মরদেহ নিজ গ্রামে এলে পুরো এলাকা কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে। পরে বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
নিহতের পরিবার জানায়, গত ২ জানুয়ারি একই এলাকার আপিয়ার রহমানের মেয়ে সার্জিয়া খাতুনের সঙ্গে রুবেল মিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের তিন দিন পর সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ নিখোঁজ হন রুবেল। এরপরই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে ওই দিনই রুবেল মিয়ার বাবা নুরুল আমিন লালমনিরহাট সদর থানায় ছেলে নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এদিকে স্থানীয় মাহফুজার রহমান নামে এক যুবক তার ফেসবুক আইডিতে রুবেল মিয়ার ছবিসহ নিখোঁজের একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে রুবেলের খোঁজ পেতে মোবাইল নম্বরও উল্লেখ করেন তিনি। ঢাকায় উদ্ধার হওয়া এক অজ্ঞাত মরদেহের পরিচয় পেতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ মাহফুজারের স্ট্যাটাসে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে নিখোঁজ রুবেলের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়। তাতেই পরিচয় শনাক্ত হয় রুবেলের। পরে শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে নিহত রুবেলের পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ।
রুবেলের বাবা বলেন, রুবেল আমার একমাত্র ছেলে। তাই ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দিয়েছি। এই বিয়ের কারণেই তার ছেলেকে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি তার ছেলের বউ সার্জিয়া খাতুনের অন্য কোথাও সম্পর্ক থাকতে পারে এবং ওই ব্যক্তিই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ প্রশাসনের কাছে তার ছেলে রুবেল হত্যার বিচার দাবি করেন।
রাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন মোফা জানান, বিয়ে-সম্পর্কিত ঘটনার কারণেই হয়তো এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, রুবেল মিয়া নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে তার পরিবার। এরপরই আমরা খোঁজখবর নিয়েছি। পরে হঠাৎ ঢাকা থেকে খবর আসে রুবেল মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, রুবেল মিয়ার পরিবার দাবি করছে, তাদের পুত্রবধূ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আছেন। পরিবার অভিযোগ দিলে মামলাটি তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এনএ