সাইকেলে দেশ ভ্রমণ, গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষার বার্তা আশিষের
সাইকেলে দেশ ভ্রমণের পাশাপাশি গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিচ্ছেন আশিষ
আশিষ কুমার মোদক। ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেছেন। সাইক্লিং করতে ভালবাসেন তিনি। সেই ভালোবাসা আর শখ থেকেই বাইসাইকেলে দেশের ৬৪ জেলা ঘুরে বেরিয়েছেন তিনি। দেশঘুরে পরিবেশ রক্ষায় সাধারণ মানুষের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন সচেতনতার বার্তা, সেই সঙ্গে লাগিয়েছেন দুই শতাধিক গাছ।
জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার কৃষক বাবা অক্ষয় কুমার মোদকের হাত ধরেই আট বছর বয়সে সাইকেল চড়ার হাতেখড়ি আশিষের। ছেলের তীব্র ইচ্ছাতে ধরে ধরে সাইকেল চালানো শিখিয়েছেন বাবা।
বিজ্ঞাপন
তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় স্কুলে যাওয়ার জন্য পুরাতন একটি সাইকেল কিনেও দেওয়া হয় তাকে। এরপর পঞ্চম শ্রেণী পাস করার পর ছেলের আবদারে নতুন সাইকেল কিনে দেন তার বাবা। ছোটবেলা থেকে এভাবেই সাইকেলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে আশিষের।
তখন ভাবেননি এই সাইকেলে চড়েই একদিন ঘুরে বেড়াবেন এক জেলা থেকে আরেক জেলা, চক্কর দেবেন পুরো দেশ। ২০১৮ সালে সাইকেলে দেশ ভ্রমণ করা বন্ধু সাব্বির হোসাইনকে দেখে মূলত অনুপ্রাণিত হন সাইক্লিংয়ে। নতুন করে প্রেম হয় সাইকেলের সঙ্গে, হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর সাইক্লিস্ট।
বিজ্ঞাপন
মেডিকেলের ছাত্র হওয়ায় পড়াশোনার কারণে তার সেই মনোবাসনা পূরণ করা মোটেও সহজ ছিল না। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। শখ পূরণ করতে কাজে লাগিয়েছেন দুই ঈদ ও পূজার ছুটি। ছুটিতে দুই ধাপে এক মাসে ঘুরেন ২২টি জেলা।
এরপর এমবিবিএস শেষ পর্বের পরীক্ষা সম্পন্ন করেই গত ২৭ নভেম্বর বেরিয়ে পড়েন লক্ষ্য পূরণে। অবশেষে তৃতীয় ধাপে এক মাস ২৭ দিনে বাকি ৪২ জেলা ভ্রমণ করার মাধ্যমে তিনি পুরো বাংলাদেশ ঘোরেন সাইকেলে চড়ে।
কী উদ্দেশ্যে তিনি সাইকেলে ঘুরেছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে আশিষ বলেন, ‘প্রথমত আমার আগে থেকেই দেশ ঘোরার একটা ইচ্ছা ছিল। তারপর যখন আমি সাইক্লিং শুরু করি তখন থেকেই সাইকেলে দেশ ঘোরার একটা পরিকল্পনা করি।’
তিনি বলেন, দেশ ঘুুরলে দেশকে জানা যায়। অনেক রকম মানুষের সঙ্গে মেশা যায়। মানুষের সঙ্গে মিশলে মানসিক উন্নতি হয়। নিজেকে চেনা যায়। বোঝা যায় আমি অসুখী না, আমার চেয়েও অসুখী মানুষ আছে। নিজেকে জানার জন্যই দেশ ঘোরা উচিত।
আশিষ শুধু সাইকেলে চড়ে দেশ ঘুরেছেন তা নয় বরং মানুষের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন সচেতনতার বার্তা। লাগিয়েছেন পরিবেশ বন্ধু গাছও।
আশিষ বলেন, আমি চেষ্টা করেছি এ ভ্রমণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে। সেজন্য আমি ২শ এর বেশি গাছ নিজ খরচে লাগিয়েছি। এটাই আমার ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য।
আমার চিন্তা ছিল, একটি প্রতিপাদ্য বিষয় ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আমি নিজে কিছু একটা করব। শুধু প্রতিপাদ্য বিষয় নয়, সেই কাজটি যদি আমি করে দেখাই তাতে মানুষ আরও বেশি উৎসাহী হবে। সেই চিন্তা থেকে ‘গাছ লাগান, পৃথিবী বাঁচান’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে ঘুরেছি এবং নিজের হাতে গাছ লাগিয়েছি। এতে আমাকে সবাই সহযোগিতা করেছেন এবং অনেকে দেখে উৎসাহিতও হয়েছেন।
ডা. আশিষ জানান, ২৭ নভেম্বর প্রথম ময়মনসিংহ থেকে ভ্রমণ শুরু করেন। এরপর গত ২৬ জানুয়ারি সর্বশেষ কক্সবাজারে গিয়ে ৬৪ জেলা ভ্রমণ পূর্ণ করেন। এতে সব মিলিয়ে তিনি প্রায় পাঁচ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছেন সাইকেলে। ভ্রমণে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে গাছ কেনা বাবদ খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সব জেলাতেই থেকেছেন পরিচিত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে।
দেশের মুগ্ধকর রূপ ভ্রমণের সকল ক্লান্তি মুছে দিয়েছে আশিষের। আশিষ কুমার বলেন, সাইকেলে মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর ঘুরে আমাদের দেশের সৌন্দর্য দেখার চেষ্টা করেছি। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশতে পেরেছি, কথা বলতে পেরেছি এবং অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। এটাও দেশের এক ভিন্ন সৌন্দর্য বলে আমি মনে করি।
সাইকেল ভ্রমণের বেশ কিছু সতর্কতার কথাও জানান এ যুবক। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, নিজের শরীরের ওপর বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। যতটুকু সামর্থ্য আছে তার চেয়ে কম রাইড করা উচিত। শারীরিক দক্ষতা বুঝে তারপর ভ্রমণে বের হতে হবে।
তিনি আরও জানান, সাইকেল চালালে শরীর থেকে অনেক বেশি ঘাম বের হয়। সেজন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে বেশি এনার্জিযুক্ত খাবার খেতে হবে। রাস্তাঘাটে অধিক সতর্ক থাকতে হবে, রাতে যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং সেই সঙ্গে রেফারির বাঁশি ব্যবহার করতে হবে।
এসপি