কাজে ব্যস্ত শ্রমিক

রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক নির্মাণ কাজ শুরুর দেড় বছর পার হলেও এখনও শেষ হয়নি জমি অধিগ্রহণ। দ্রুত অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করা না গেলে প্রকল্পের কাজে দেখা দিতে পারে জটিলতা। বিলম্ব হতে পারে মহাসড়ক নির্মাণ। করোনার কারণে পাথর আর বৈধ বালুর সংকট থাকায় নির্মাণ কাজেও কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে।

সড়ক নির্মাণ প্রকল্প প্যাকেজ-৭ এর ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী ম. আফিদ হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্যাকেজ-৭ এ গাইবান্ধার পলাশবাড়ি থেকে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণ করছে সরকার। এর মধ্যে পলাশবাড়ি থেকে ধাপেরহাট পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার ও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার দুই কিলোমিটার সড়কের দুই ধারের জমি প্রকল্প কর্মকর্তাদের কাছে এখন পর্যন্ত হস্তান্তর করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকেরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পীরগঞ্জের বড়দরগা, লালদিঘী এবং পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের আগ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়াতে এখন সেখানে চলছে সড়ক নির্মাণ কাজ। সড়কের দুইপাশে বালু-পাথর আর ইট-খোয়ার স্তুপ পড়ে আছে। নির্মাণ শ্রমিকরা কোথাও মাটি চাপা দিচ্ছে, আবার কোথাও বালু ফেলছে। সড়কের কোথাও কোথাও বালু ফেলা শেষে খোয়া ব্যবহারের পর পাথরও ফেলানো হয়েছে। ছিটানো হচ্ছে পানি। সঙ্গে রোলার মেশিনের চাপায় বসানো হচ্ছে পাথর, খোয়া আর বালু।

শুধু তাই নয়, সড়কের দুই পাশের কোনো কোনো জায়গায় স্থাপনা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়াতে মহাসড়কের ব্যাপকতা যেন অনেকটাই দৃশ্যমান। কিছু দূর পর পর কালভার্টগুলো জানান দিচ্ছে মহাসড়কের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে রংপুর-ঢাকা যাতায়াতের ব্যস্ততম এই সড়কটি। ইতোমধ্যে নির্মাণাধীন সড়কের কিছু অংশে কংক্রিটের কাজ শুরু হয়েছে।  

খোয়া ঢালাইয়ের কাজ চলছে

এ ব্যাপারে প্রকৌশলী ম. আফিদ হোসেন বলেন, পলাশবাড়ি থেকে পীরগঞ্জের বড়দরগা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে কংক্রিট ঢালাই সড়ক রয়েছে সাড়ে ৮ কিলোমিটার। এই কংক্রিট সড়ক নির্মাণ করা হবে পীরগঞ্জের লালদিঘী, খেদমতপুর, গাইবান্ধার ধাপেরহাট এবং পলাশবাড়িসহ অন্যান্য বাজার এলাকায়। আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে পীরগঞ্জের লালদিঘিতে ৩০ মিটার, পীরগঞ্জে ৬৯ মিটার, ধাপেরহাটে ৩০ মিটার এবং পলাশবাড়িতে ১৭৮ মিটার। সড়কের মধ্যে ৩০টি কালভার্ট থাকবে। ইতোমধ্যে ২৬টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভূমি অধিগ্রহণে সৃষ্ট জটিলতার কারণে পলাশবাড়ি থেকে ধাপেরহাট এলাকায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। এই অংশের ৮ কিলোমিটার সড়কের দুই ধারে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। কবে নাগাদ জমি হস্তান্তর করবে তা বলা যাচ্ছে না। একই অবস্থা পীরগঞ্জ উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকার দুই কিলোমিটার অংশে।

এদিকে, গাইবান্ধার পলাশবাড়ি থেকে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কের জন্য এই দুই জেলায় ১৭৬ দশমিক ৮৮ একর জমির প্রয়োজন। ইতোমধ্যে রংপুর অংশে ৭৮ দশমিক ২৪ একর জমি পাওয়া গেছে। গাইবান্ধা অংশের ৩৩ দশমিক ৪৪ একর জমি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

নির্মাণধীন এই রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে ব্যয় হবে ৫২৫ কোটি টাকা। সড়ক নির্মাণ শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২২সালের জুন মাসে। ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৬ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে।

 প্রকল্প এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে

জমি অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে রংপুর জেলা প্রশাসকের কাছে ১২০ কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এখন পর্যন্ত ৯৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান প্রকৌশলী ম. আফিদ হোসেন।

স্থানীয়রা রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক নির্মাণ কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করলেও কারো কারো মন ভেঙেছে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বসতভিটা ভেঙে যাওয়াতে। 

পীরগঞ্জের লালদিঘী বাজার এলাকার জুয়েল ইসলাম বলেন, আমাদের রংপুর থেকে ঢাকা যেতে অনেক সময় লাগে। এখন কিছুটা হলেও সময় বাঁচানো যাবে। দ্রুত ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। এই মহাসড়কের কাজ শেষ হলে স্থানীয়রা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে।
 
পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি তো সড়ক নির্মাণের জন্য জমি দিতে রাজি। কিন্তু অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হওয়াতে তা বিলম্ব হচ্ছে। এই সমস্যা অন্যদেরও হয়েছে। 

ব্যবসায়ী সেবু সরকার বলেন, সড়কটি দৃশ্যমান হলে পুরো এলাকার চিত্র বদলে যাবে। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। কিছু কিছু উন্নয়ন মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে, এমনটাই হতে যাচ্ছে এই মহাসড়ক নির্মাণের মধ্যদিয়ে। এখন সড়কের ওপর হাটবাজার বসলেও এই চিত্র আর দেখা যাবে না। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে।

সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলছে

এদিকে সড়ক নির্মাণ প্রকল্প প্যাকেজ-৭ এর উপপ্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. সাইমুম আতিক জানান, রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে রিজিপেইভমেন্ট (কংক্রিটপেইভার) নামে একটি অত্যাধুনিক মেশিন; যা এর আগে বাংলাদেশে আর কোথাও ব্যবহার হয়নি। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কন্সট্রাকশন সেভেনথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন করপোরেশন লিমিটেড এটি নিয়ে এসেছে। এই যন্ত্রটির মূল্য প্রায় দুইশ কোটি টাকা। 

আগামী বছরের শুরুতে চীন থেকে একদল প্রকৌশলী রংপুরে এসে মেশিনটির পুনঃস্থাপন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এই যন্ত্র দিয়ে হাতের স্পর্শ ছাড়াই কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা হবে।

সাড়ে ৮ কিলোমিটার কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ ও চারটি আন্ডারপাস নতুন করে সংযুক্ত করায় প্রকল্প ব্যয় প্রায় অর্ধেক বাড়বে। এসব কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা হবে সড়কের দু’পাশের বাজার এলাকায়। এর ফলে সড়কের কোনো ক্ষতি হবে না। ইতোমধ্যে সড়ক নির্মাণের জন্য পল্লীবিদ্যুতের খুঁটি, বিটিসিএলএর তারসহ বিভিন্ন স্থাপনা অপসরণ করা হয়েছে।

এসপি