নেত্রকানার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি হাওর উপজেলা খালিয়াজুরী। জেলা শহর থেকে উপজেলার দূরত্ব ৬০ কিলামিটার। বছরের আট মাস পানিবন্দি জীবন কাটাতে হয় বাসিন্দাদের। এ অবস্থায় জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলাবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে দুই বছর আগে ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ডুবন্ত সড়ক (সাব মার্জিবল) নির্মাণ করলেও ধনু নদে কোনো সেতু না থাকায় তা খুব একটা কাজে আসেনি।

ফলে দীর্ঘ দিনের সমস্যার অবসান হচ্ছে অবশেষে। ওই উপজেলাকে বিচ্ছিন্ন করে প্রবাহিত হওয়া ধনু নদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে একটি ফেরি। ফেরিটি রসূলপুর ঘাটে পৌঁছালে যেকোনো যানবাহনে পৌঁছানো যাবে খালিয়াজুরী উপজেলা শহরে। এই খবরে খুবই খুশি হাওরদ্বীপের বাসিন্দারা।

সম্প্রতি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন খালিয়াজুরী উপজেলা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে খালিয়াজুরীর কৃতিসন্তান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তার উপজেলাবাসীকে ফেরি বরাদ্দের সুখবর প্রথম দেন। তিনি তার নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘চেষ্টা করছিলাম ধনু নদীতে একটি ফেরির ব্যবস্থা করতে। আজ সেই ফেরিটির অনুমোদন হলো। জয়বাংলা।’

খালিয়াজুরী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক স্বাগত সরকার বলেন, উপজেলা সদরে কোনো যানবাহন না আসায় আমরা সব দিক থেকে পিছিয়ে আছি। ইউনিয়নগুলো থেকে কেউ চাইলেই রাতের বেলা উপজেলা সদরে আসতে পারেন না। জরুরি ও জটিল রোগীদের পরিবহন করা সম্ভব হয়ে উঠে না।

দূরের শিক্ষার্থীরা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে নিয়মিত ক্লাস করতে পারে না। কৃষিপণ্য ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করতে হয় শ্রমিক দিয়ে। তাই একটি ফেরি চালু হলে আমাদের উপজেলার চিত্রটি সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। গতি আসবে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে।

খালিয়াজুরী উপজেলা নিবার্হী কর্মকতা (ইউএনও) এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ধনু নদের জন্য দীর্ঘ দিন এই উপজেলা শহর বিচ্ছিন্ন ছিল। জরুরি প্রয়োজন বা কোনো প্রসূতি মাকে নিয়ে জেলা শহরে যেতে পারেনি স্থানীয়রা। রসুলপুর ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালু হলে জেলা সদর, বিভাগ কিংবা রাজধানীর সঙ্গে খালিয়াজুরীর সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

খালিয়াজুরী থেকে জেলা সদর পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করা যাবে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার নিয়ে খুব সহজেই পৌঁছা যাবে খালিয়াজুরীতে। এ ছাড়া কৃষিনির্ভর এ এলাকার কৃষকদের পণ্য পরিবহন সহজ হবে।

নেত্রকানা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকোশলী হামিদুল ইসলাম বলেন, খালিয়াজুরী উপজেলার রসুলপুর ঘাটে ধনু নদে একটি ফেরি সার্ভিস চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটির বরাদ্দ হবে।

প্রসঙ্গত, খালিয়াজুরীর শিক্ষার্থীদের ফাইজার টিকা সরবরাহ করতে গত বুধবার (১২ জানুয়ারি) স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি লাল রঙের গাড়ি এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কালো রঙের চার চাকার গাড়ি দুটি নিয়ে আসা হয়। তবে এর আগে এ উপজেলা শহরে কখনো চার চাকার কোনো গাড়ি প্রবেশ করেনি। গাড়ি দুটির বরাদ্দ আগে থেকেই থাকলেও সড়ক যোগাযোগ না থাকায় তারা গাড়িগুলো কর্মস্থলে নিয়ে যেতে পারেননি।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের টিকা পরিবহন করতে অবশেষে তারা ওই দুটি গাড়ি সেখানে নিয়ে যান। তাও আবার খুব সহজে নিতে পারেননি। ধনু নদে পাড় করতে গাড়িগুলোর জন্য কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা থেকে একটি বড় নৌকা আনা হয়। তারপর অনেক ঝক্কি ঝামেলা শেষে গাড়ি দুটিকে খালিয়াজুরী উপজেলা শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। আর প্রথমবারের মতো শহরে চার চাকার গাড়ি দেখে অবাক হয় খালিয়াজুরীর মানুষ। 

জিয়াউর রহমান/এসপি